বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » লালমোহনে খেলার মাঠে কাঁচ ভাঙা, খেলতে গিয়ে আহত ১০ কিশোর ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহনে খেলার মাঠে কাঁচ ভাঙা, খেলতে গিয়ে আহত ১০ কিশোর ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহন উপজেলার ৬নং ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আনিচল হক মিয়ার বাজার এলাকার ”মুসলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা” মাঠে ন্থানীয় কিশোরদের খেলায় বাধা দিতে পরিকল্পিতভাবে মাঠে কাঁচের ভাঙা টুকরো ফেলায় অন্তত ১০কিশোর ফুটবলার আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড কিশোরগঞ্জ ও ৬ নং ওয়ার্ড আসুলী এলাকার কিশোররা দীর্ঘদিন যাবৎ একসঙ্গে এলাকার বিভিন্ন স্থানে খেলাধুলা করতো। আনিচল হক মিয়ার বাজারে তারা একটি ক্রীড়া সংগঠন গঠন করে। খেলায় জিতে প্রাপ্ত ট্রফি সংগঠনেই সজ্জিত রাখা হতো। মাস কয়েক পূর্বে অজানা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে সংগঠনে থাকা ট্রফি ভেঙে ফেলে কিশোরগঞ্জ এলাকার মো: আ: হক মিয়ার ছেলে। সেই থেকে আসুলী ও কিশোরগঞ্জ এলাকার কিশোররা আলাদা হয়ে খেলাধুলা করতে থাকে।
উভয় ওয়ার্ডের কিশোরদের খেলাধুলা করার একমাত্র মাঠ মুসলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠ। মাঠের পাশেই ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো: শামিম এর চাচা আকতারুজ্জামান ওরপে আতরজমা গরুর চাড়ি (ঘাস খাবার পাত্র বিশেষ) তৈরী করেন। গত ঈদুল আজহার কিছুদিন পূর্বে খেলার মাঠে কাঁচের টুকরো ফেলবেন বলে কিশোরদের হুমকি দেন আতরজমা। তার দু-দিন পর থেকেই মাঠে খেলতে গিয়ে কাঁচের টুকরোর সাথে পা হাত কেটে আহত হয় প্রায় ৮জন কিশোর। ইউপি সদস্য শামিমকে বিষয় জানিয়েও কোন বিচার না পাওয়ায় অভিযোগের তীর তার দিকে।
সূত্র জানায়, মুসলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে আসুলি ও কিশোরগঞ্জ এলাকার যৌথ মাহফিল হতো। মাহফিলের চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দু এলাকার মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সেই থেকে উভয় ওয়ার্ডে আলাদা মাহফিলের প্রস্তুতি ও চলছে। সেটা কে কেন্দ্র করেও আসুলী এলাকার কিশোরদের ক্ষোভের বলী করা হতে পারে বলে মন্তব্য করছেন আসুলী এলাকার জনগণ।
গুরুত্বর আহত আসুলী এলাকার মো: মোতাহার মিয়ার ছেলে সবুজ জানায়, মাঠে খেলতে গিয়ে কাঁচের টুকরো আমার পায়ের গোড়ালীতে ঢুকে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে আমি স্থানীয় বাজারের ফার্মেসীতে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচিত মাঠে কাঁচের টুকরো কোথা থেকে এল? জানতে চাইলে সবুজ জানায়, কিছুদিন পূর্বে আতরজমা নামের লোকটি মাঠে কাঁচের টুকরো ফেলার হুমকি দিয়েছিল। তারপর থেকেই এমনটা ঘটতে থাকে।
কাঁচের টুকরোর আঘাতে আহত হয়েছেন, আসুলী এলাকার কালাম বেপারীর ছেলে আকতার, লোকমান বিশ্বাসের ছেলে মিজান, হারুন মিয়ার ছেলে তারেক, সাদ্দাম।
খেলতে গিয়ে আহত হয় স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যার ছেলে শাকিব। জানতে চাইলে তাঁর স্বামী মো: হারুন মিয়া ক্ষোভের সহিত বলেন, খেলার মাঠে কাঁচের টুকরোর সাথে এতগুলো ছেলে আহত হওয়ায় আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুরুন্নবী মেম্বারের ছেলে এনামুল হক বলেন, পূর্বে দু- এলাকার কিশোরদের সাথে কাপ নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণেই আসুলী এলাকায় একটি ক্রীড়া সংগঠন তৈরী করে আলাদা হয়ে পড়ে এ এলাকার কিশোররা। কাঁচের টুকরোর সাথে আহত হওয়ার ঘটনায় আমার বাবাসহ স্থানীয় কয়েকজন শামীম মেম্বারকে অবহিত করেছিল। কিন্তু তিনি তেমন কোন ভূমিকা পালন করেননি।
আসুলী ৬নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মো: নুরুন্নবী বলেন, মাদ্রাসার মাঠে কাঁচের টুকরোর সাথে ছেলেদের পা কেটেছে শুনেছি। আতরজমা নামের এক ব্যাক্তি হুমকি দিয়েছিল সংবাদ পেয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করেছি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ওই ওয়ার্ড মেম্বার শামিম কে জানিয়েছিলাম।
জানতে চাইলে ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো: শামিম জানান, শুনেছি ২/৩ জন কিশোরের পা কেটেছে। তবে আমাকে কেউ অবহিত করেনি।
গত ঈদুল আজহার কিছুদিন পূর্বে “আসুলী খেলাঘর” এর কিশোরদের অনুরোধে তাদের কে খেলার উপকরণ প্রদান করেন ঢাকা কদতলী থানা আওয়ামীলীগ সদস্য ও ফরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান মো: ফারহাদ নাঈম।
কিন্তু সেই কিশোরদের ওপর এমন অমানবিক কর্মকান্ডে বিস্মিত তিনিও।
ফারহাদ নাঈম বলেন, মাদকের ভয়াবহ ছোবল যাতে এলাকার কিশোর তরুণদের আঘাত হানতে না পারে, সে জন্যই তাদের অনুরোধে আমি খেলাধুলা উপকরণ প্রদান করেছি। তাদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আহত কিশোরদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি।
পাশাপাশি খেলাধুলা ও কিশোরদের অপশক্তির হাত থেকে বাঁচাতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এলাকার দ্বন্দ্বে কিশোরদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় হতবাক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।