বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ভোলা | শশীভূষণ | শিরোনাম | সর্বশেষ » ভোলায় শশীভূষণ থানার ওসি হানিফ সিকদারকে প্রত্যাহারে আদালতের আদেশ নিয়ে ধ্রুমজাল।।লালমোহন বিডিনিউজ
ভোলায় শশীভূষণ থানার ওসি হানিফ সিকদারকে প্রত্যাহারে আদালতের আদেশ নিয়ে ধ্রুমজাল।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার ওসি মো. হানিফ সিকদারকে প্রত্যাহারের জন্য চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আদেশ নিয়ে চোর-পুলিশের খেলা চলছে। গত ৯ জানুয়ারী চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের হাকিম মো. শিবলী নোমান খান শশীভূষণ থানার জনগনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ওই ওসির কৃত খামখেয়ালীপনার কারণে তাঁকে (ওসি) সত্বর শশীভূষণ থানার ওসির পদ থেকে প্রত্যাহারসহ ভবিষ্যতে এরুপ গরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন না করার জন্য ভোলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আদালতের এই আদেশ প্রদানের পর কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বরং বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্য থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছে।
শশীভূষণ থানার একটি মামলার সাক্ষী মোঃ আবুল কাশেমকে আসামী সাজিয়ে আদালতে চালান করার ঘটনায় দীর্ঘ শুনানী শেষে আদালত গত ৯ জানুয়ারী ওই আদেশ প্রদান করেন। আদেশ প্রদানের সময় মামলার বাদি লোকমান হোসেন, কথিত আসামী মো. আবুল কাশেম এবং শশীভূষণ থানার ওসি মো. হানিফ সিকদার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার নথিসূত্রে জানাযায়, ২০১৫ সনে চর কলমী ইউনিয়নের লোকমান হোসেন ধানকাটার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। নং ৩২৪/১৫(শশী)। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান আছে। ওই মামলার ৩নং সাক্ষী মো.আবুল কাশেম। গত ৬ জানুয়ারী শশীভূষণ থানার এস আই মো.জাকির হোসন ওই মামলার ৩নং স্বাক্ষী আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে থানায় নেন। পরে চরকলমী ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মামলার বাদি লোকমান হোসেন’র স্ত্রী থানায় গিয়ে আবুল কাশেমকে মামলার সাক্ষী বলে জানালেও ওসি তা শোনেন নি। পুলিশ ৭ জানুয়ারী আসামী হিসেবে সাক্ষী আবুল কাশেমকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। বাদি লোকমান হোসেন জানান, সাক্ষী আবুল কাশেমকে জেল হাজতে পাঠানোর পর তারা বিষয়টি আদালতকে অবগত করলে বিজ্ঞ আদালত ৯ জানুয়ারী ভোলা জেল হাজত থেকে আবুল কাশেমকে পিডব্লিউ মূলে চরফ্যাশন আদালতে হাজির করেন এবং আদালতের তলবে একই দিন শশীভূষণ থানার ওসি মো.হানিফ সিকদারও আদালতে হাজির ছিলেন। মামলার বাদি, ওসি এবং হাজতি সাক্ষী আবুল কাশেমের উপস্থিতিতে দীর্ঘ জামিন শুনানীর পর বিজ্ঞ আদালত মো. আবুল কাশেমকে মুক্তির আদেশ দেন এবং শশীভূষণ থানার ওসি হানিফ সিকদারকে ওই থানা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ প্রদান করেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, মো.আবুল কাশেমকে অত্র মোকদ্দমায় চালান দিয়েছেন, যা জনগনের সেবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং খামখেয়ালীপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হানিফ সিকদার ধৃত ব্যক্তিকে আইনী সুরক্ষা না দিয়ে সকল যুক্তি অগ্রাহ্য করে তাকে আইনী জটিলতার মধ্যে ফেলে ০২ দিনের হাজতবাস করিয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশের মহান সংবিধানে কোন ব্যক্তিকে বিনা অপরাধে ০১ দিনের জন্যও আটক রাখার কোন সুযোগ নেই। সেখানে সাক্ষী মোঃ আবুল কাশেম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হানিফ সিকদারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তার জীবন থেকে মূল্যবান দু’টি দিন হারিয়েছে ফেলেছেন। এর দায় রাষ্ট্র কখনও বহন করবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া গেলেও এই স্বেচ্ছাচারিতায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে তার বর্তমান পদে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছন সেটা নির্দ্ধিদায় বলা যায়। আদালত আরো বলেছেন- ফেজদারী মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষায় যেখানে রাষ্ট্র আইন তৈরীর বিষয় ভাবছে, সেখানে বর্তমান মামলার ০৩ নং সাক্ষীকে পুলিশ আসামী বানিয়ে অত্র মামলায় চালান দিয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে অপরাধের বিরুদ্ধে জনগন সাক্ষ্য দিতে ভয় পাবে। সার্বিক বিবেচনায় শশীভূষণ থানার জনগেনর ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ইতিমধ্যে ওই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হানিফ সিকদার কর্তৃক কৃত খামখেয়ালীপনার কারণে তাকে সত্বর অত্র থানা থেকে প্রত্যাহারসহ ভবিষ্যতে এরুপ কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন না করার জন্য ভোলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরদিন আদালতের এই আদেশ বিশেষ ডাকের মাধ্যমে ভোলার পুলিশ সুপার এবং ডিআইজি বরিশালকে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত ওসি মো. হানিফ সিকদারকে শশীভূষণ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি।
এদিকে এ বিষয়ে গত বুধবার জানতে চাইলে শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. হানিফ সিকদার জানান, বিজ্ঞ আদালতের আদেশের বিষয়ে গত ২১ জানুয়ারী ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপীল করেছেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁর আপীল গ্রহন করে চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আদেশের কার্যকারীতা স্থগিত করেছেন এবং আপীল শুনানীর জন্য রেখেছেন। একই দিনে ভোলার পুলিশ সুপার মো. মোকতার হোসেন জানান, গতকাল (৩০ জানুয়ারী) জেলা ও দায়রা জজ আদালত চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আদেশটি খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে শশীভূষণ থানার ওসি পদে হানিফ সিকদারের দায়িত্ব পালনে কোন বাধা নেই। তবে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র পুলিশ সুপারের বক্তব্য সঠিক নয় দাবী করে জানান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওসি হানিফ সিকদারের আপীল গৃহিত হলেও শুনানী হয়নি। শুনানীর জন্য আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য আছে। ফলে চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে দেয়া আদেশ খারিজ করা সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য সঠিক নয়।