বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন | জেলার খবর | তথ্যপ্রযুক্তি | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » লালমোহনে বিকাশের টাকা ছিনতাই, গ্রেফতার হয়নি মূল ছিনতাইকারীরা ॥ জেল খাটছে খুচড়া এজেন্ট
লালমোহনে বিকাশের টাকা ছিনতাই, গ্রেফতার হয়নি মূল ছিনতাইকারীরা ॥ জেল খাটছে খুচড়া এজেন্ট
লালমোহন বিডিনিউজ, লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহনে বিকাশ কর্মীকে কুপিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ৩দিন অতিক্রান্ত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত মূল ছিনতাইকারীরা গ্রেফতার হয়নি।
দিন দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ও কুপিয়ে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের পর দু’টি মোটরসাইকেল যোগে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় ৪ ছিনতাইকারী।
এখন পর্যন্ত তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। উদ্ধার হয়নি ছিনতাইকৃত টাকা।
আসল ৪ ছিনতাইকারীদের এখন পর্যন্ত সনাক্ত না করা গেলেও ঘটনার রাতে স্লুইজগেট এলাকার বিকাশ এজেন্ট আরিফ ও তার অসুস্থ্য বাবা মোকছেদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তারা এখন জেল হাজতে রয়েছে। দোকানে ক্যাশ আউটের টাকা নেওয়ার জন্য ফোন করার কারণে ওই এজেন্ট আরিফসহ তার বাবা এখন জেলে রয়েছে। এ ঘটনায় তাদের আদৌ কোন সংশ্লিষ্টতা আছে? না বিকাশের অফিসেরই অভ্যন্তরিণ কোন চক্র জড়িত? তা নিয়ে চলছে নানান প্রশ্ন।
গত ৫ নভেম্বর চরফ্যাশনেও বিকাশের ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছিল। ওই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত বিকাশের টাকা বহনকারী কর্মীই গ্রেফতার হয়েছে। লালমোহনের এ ঘটনা নিয়েও জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ওইদিন একই সাথে গ্রেফতার হয় বিকাশের স্টাফ শাহিনও। সে তুহিনের সাথে একই মোটরসাইকেলে ছিল। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সুক্ষ্মভাবে তদন্ত করছে বলে পুলিশ জানায়। চরফ্যাশন ও লালমোহনের দু’টি ঘটনার সাথে কোন যোগসূত্র আছে কি-না তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুঁজে বের করতে হবে।
গত রোববার বিকেলে লালমোহন উত্তরা ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে ডিএসও (ডেইলি সেল্স অফিসার) তুহিন ও শাহিন বদরপুরের দিকে রওয়ানা হয়। স্লুইজগেট থেকে আরিফ টাকার জন্য ফোন করার কারণে ওই বাজারে যায় তুহিন ও শাহিন। তাদের পিছু নেয় ছিনতাইকারীরা। বেড়ির উপর গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। স্লুইজ বাজার থেকে বিকাশ কর্মীদের ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে সেখানে।
বুধবার স্লুইজগেট এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ওই বাজারে দুইজন বিকাশের এজেন্ট রয়েছে। বিকাশের নিয়মানুযায়ী এজেন্টরা গ্রাহকের ক্যাশ আউট করার জন্য নগদ টাকার প্রয়োজন হয়। ওইদিন স্লুইজগেট বাজারের বিকাশ এজেন্ট আরিফেরও গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার জন্য নগদ টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই সে নিয়মানুযায়ী টাকা দিয়ে আসার জন্য লালমোহন অফিসের ডিএসও (ডেইলি সেলস অফিসার) তুহিনের কাছে ফোন করে। তাকে সহ বাজারের দুইজনকেই টাকা দিয়ে ফেরার পথে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ে তুহিন। কোন প্রকার বাধাহীনভাবে নির্বিঘ্নে দুটি মোটরসাইকেল যোগে নাজিরপুর দিয়ে দেবীরচরের দিকে চলে যায় ৪ ছিনতাইকারী।
স্থানীয়রা জানান, যেখানে এ ঘটনা ঘটেছিল, সেই রাস্তার দুই পাশেই ঘর বাড়ি আছে। এতোবড় ঘটনা ঘটলেও আহত তুহিন ও তার সাথে থাকা শাহিন কোন ডাক চিৎকার দেয়নি। এমনকি ছিনতাইকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে চলে যাওয়ার পরেও ডাক চিৎকার দেয়নি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দেয়, বিকাশের ওই দুইজনের কাছে নাজিরপুর, দেবিরচর সহ বিভিন্ন দোকানের বিকাশ এজেন্টদের মোবাইল নাম্বার থাকার কথা। তারা কাউকে ফোন করলে ছিনতাইকারীদের পথেই আটকাতে পারতো কেউ।
ঘটনার ১০ মিনিট পর লালমোহন থানার এক দাড়গা সেখানে উপস্থিত হন। তিনি আরেকটি অভিযোগের তদন্ত করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি খবর শুনে পরে ধাওয়া করেও নাগাল পায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই এলাকার মাতাব্বর বাড়ির দরজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র শাকিল। সে পুরো ঘটনা নিজের চোখে দেখেছে বলে জানায়। ওই সময় সাইকেল চালাতে চালাতে সে ঘটনাস্থলে আসে। এসময় দেখতে পায় একজনকে মাথায় অস্ত্র তাক করে আরেকজনকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। পরে আহত ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে তিনজন একটি মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আরো একজন উত্তর পাশে পূর্ব থেকে অবস্থান নেওয়া ছিল, সেও পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল স্লুইজগেট বেড়ির উপর মাইনুদ্দিনের চা দোকানে বসে চা খায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। মাইনুদ্দিন জানায়, রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ১টি মোটরসাইকেল যোগে ৩জন তার দোকানের সামনে দাঁড়ায়। আরেকটি মোটরসাইকেলে পেছনে ছিল ১জন। ওই তিনজনের মধ্যে একজনের বয়স প্রায় ৫০ এর মধ্যে। বাকীরা অনুমান ৩০-৩৫ বছরের। যে মোটরসাইকেল চালিয়েছিল তার চোখ বড় এবং চেহারা ছিল কালো বর্ণের। একজনের মুখে দাঁড়িও ছিল। তারা দোকানে বসে চা খায়। এক পর্যায়ে মোবাইলে কথাও বলে তারা। মাইনুদ্দিন তাদের আগে কখনো দেখিনি। এখানে কেন এসেছে জানতে চাইলে তারা এখানে মোটরসাইকেল কিনতে এসেছে বলে জানায়। ২০ মিনিট এখানে অবস্থান করার পর তারা স্লুইজগেটের দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ওই দু’টি মোটরসাইকেল দ্রুতবেগে দোকানের সামনে দিয়ে বের হয়ে নাজিরপুর হয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারেন তারা পেছনে বিকাশের কর্মীকে কুপিয়ে টাকা ছিনতাই করে পালিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কেউ ডাক চিৎকার দিলে এদের আটকাতে পারতেন বলে মাইনুদ্দিন জানান। ওই সময় দোকানের সামনে স্থানীয় আরো লোক ছিল।
ছিনতাইকারীদের বেড়ির উপর দেখেছেন সেখানকার মসজিদের মোয়াজ্জেম জাফর আহমেদ ফরাজী। তিনি জানান, আসরের আজান দিতে মসজিদে রওয়ানা হচ্ছিলেন তিনি। এসময় তাদের মসজিদের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। জিজ্ঞেস করলে তাকেও মোটরসাইকেল কিনতে এখানে এসেছে বলে জানায় তারা।
স্লুইজবাজারের ইদ্রিস মিয়া ও মোঃ কবির জানান, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বিকাশের এজেন্ট। তার লেনদেনের পরিমাণ বেশি। ওইদিন বিকেলে তার দোকানে কয়েকজন বিকাশ গ্রাহক ক্যাশ আউট করতে আসে। তার কাছে টাকা না থাকায় সে বিকাশের লালমোহনের ডিএসও তুহিনের কাছে ফোন করে। তাকে দ্রুত টাকা দিয়ে যেতে বলে। তুহিন এভাবেই সেখানে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছে। নিয়মমাফিক সেদিনও যায়।
স্থানীয়রা জানান, আরিফ ও তার বৃদ্ধ অসুস্থ বাবাকে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িয়ে অযথা হয়রানী করছে। তারা এলাকায় সুপরিচিত। এতে মূল পরিকল্পনাকারী বা ছিনতাইকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতে পারে বলেও জানান স্থানীয়রা। তারা জানান, ওই সময় আরিফ বিকাশের ডিএসও তুহিনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সাথে সাথে ক্যাশ আউট করা গ্রাহকদের দিতে ব্যস্ত ছিল। তুহিন টাকা দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরই এ ঘটনা ঘটে।
লালমোহন থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন জানান, আহত বিকাশ কর্মী তুহিনকে স্লুইজগেট বাজারের বিকাশ এজেন্ট আরিফ বার বার ফোন দিয়ে সেখানে নিয়েছে। তার কারণে তারা জড়িত থাকতে পারে বলে তুহিন তাদের অভিযুক্ত করেছে। এ কারণে আরিফ ও তার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিকাশের ম্যানেজার মামুন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাবুল জানান, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। তাই আমরা সুক্ষ্মভাবে তদন্ত করছি। আটককৃতদের রিমান্ডের আবেদন করেছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে থানায় এনে জীজ্ঞাসাবাদ করা হবে।