মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » শিক্ষার নামে বাণিজ্যে মেতে উঠেছে লালমোহনের হা-মীম একাডেমি
শিক্ষার নামে বাণিজ্যে মেতে উঠেছে লালমোহনের হা-মীম একাডেমি
লালমোহন বিডিনিউজ,ভোলা প্রতিনিধি : বরিশাল বিভাগের আলোচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভোলার লালমোহন হা-মীম রেসিডিন্সিয়াল একাডেমিতে শিক্ষার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে গলাকাটা ফি আদায় করা হয়। সঠিক সময়য়ে প্রতিষ্ঠানের ধার্য্য ফি’ পরিষদ করতে না পারলে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অশুভ আচারণ ও বেত্রগাত করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আয়ের ১০% আয়কর না দেওয়ার ফন্দি হিসেবে সাড়া রছরই একাডেমির নামে ব্যাংক লোনের সাইনবোর্ড সাটিয়ে রাখে । প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রুহুলআমিন নুন্যতম আয়কর দিয়ে মোটা অংকের কর ফাকিঁ দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সময় মোট অংকের বিনিময় একাডেমীর শিক্ষার্থদেও জন্য কেন্দ্রের নকল সহায়ক হলরুম নির্ধরন, হল সচিব ও অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি বসিয়ে বিশেষ সুবিধা দিয়ে পাসের হার ১০০% নিশ্চিত সহ ব্যাপক এ+ পেয়ে থাকে। এবছর এসএসসি পরীক্ষা সম্পুর্ন নকল মুক্ত হওয়ায় একাডেমীর বিগত দিনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতি বছর গন্ডায় গন্ডায় এ+ থাকলেও ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কোন এ+ নেই। এ+ এর ব্যাপক প্রচারকারী এই একাডেমীর এবছরের এস,এস,সি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে শিক্ষক সমাজ, অভিভাক সহ সচেতনমহলে।
অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রুহুল আমিনের উত্তর বাজারের প্রাইভেট পাঠদানকারী টেক্সার থেকে ২০০৫ লালমোহন পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডে লালমোহন হা-মীম রেসিডেন্সিয়াল একাডেমি যাত্রা শুরু করে।। তারপর থেকে বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় ফলাফলের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে অর্থশালী অভিভাবকদের নজরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। যে সমস্ত অভিবাবক তাদের সন্তানদেও বাসায় পড়ার টেবিলে বসাতে পারতনা তারাই তাদের সন্তানদেও হামিম একাডেমীর বন্ধিশালায় পাঠদান করতে পাঠাতো।অর্থ কামাইয়ের হাতিযার হিসেবে তার পছন্দের শিক্ষার্থী হল প্রবাসী ও ব্যাবসায়ীদের সন্তান। আজও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার প্রায় ৮০% শিক্ষার্থী হল প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের সন্তান। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অবিভাবক মহলকে আকৃষ্ট করে তাদের ছেলে মেয়েদের ভর্তি করানো হয়।
প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বেতন নেওয়া হয় আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজারের উপড়ে। এছাড়াও আবাসিক প্রায় ৩ শত ছাএ থেকে সিট ভাড়া ৫-৭শ, ডাইনিং খরচ ৩থেকে৪ হাজার আদায় করা হয়। আবাসিক/ অনাবাসিক মিলে প্রায় ৭/৮শত শিক্ষার্থী পাঠ দান করে এ প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। টাকা দিলে সারা বছরই ভর্তি করানো যায়। আবার প্রতি বছর এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে ভর্তির জন্য ২ হাজার ৫’শ থেকে জন প্রতি ৩ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। বছওে তিনটি সাময়িক পরীক্ষর নামে শিক্ষার্থীদেও কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ আদায় করলেও রুহুল আমিন কাগজ কেনা ছাড়া একটি পয়সাও খরচ কওে না। পরীক্ষার সময় শিক্ষকরা কক্ষ পরিদর্শক সহ সকল পরীক্ষার পেপার দেখলেও একটি টাকাও শিক্ষকরা পকেটে নিতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে যে ভাবে গলাকাটা অর্থ আদায় করা হলেও শিক্ষার মান বরাবরই অসšুÍষ্ট অভিবাবকরা। তাদের উদ্দেশ্য শিক্ষা নয়, সু কৌশলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে ম্যানেজিং কমিটি থাকলে কর্যক্রম নেই। মো. রুহুল আমি নিজে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তার ভাই ফখরুল সহ আরো এক ভাইকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশ্রাফ নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আসছে। পরীক্ষায় নকলের সুবিধা নিতে লালমোহন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ পৌর শহরের একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হা-মীম একাডমিতে পার্ট টাইম চাকুরী করে।।পাবলিক পরীক্ষার সময় এ সকল পার্টটাইম শিক্ষকরাই একাডেমির ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার হলে গার্ড দিতে দেখা যায়।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় নকলের সুবিধা না পাওয়ায় নামে মাত্র এ ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১ জন পরীক্ষার্থীর জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করতে পারেনি। ফেলের খাতায়ও নাম লিখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রুহুল আমিনের কাছে প্রতিষ্ঠানটির এ বছরের এস এস সি পরীক্ষায় ফলাফলে এ+ বিপর্যয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সে বলেন, এ সমস্যা শুধু আমার প্রতিষ্ঠানে নয় সারা বাংলাদেশের। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কোন শিক্ষার্থী এ(+) পায়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যষ প্রতিষ্ঠানের মালিকের ইচ্ছে মতই হয়ে থাকে। তিনি তার পছন্দের ও নিকট আত্বীয়দের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রেখেছেন। এবারের এসএসসি পরীক্ষার হল গুলোতে কঠোর নজরদারী ও সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকার দরুন তিনি হল ম্যানেজ সহ কোন প্রকার সুযোগ নিতে পারেন নি এমন প্রশ্নের জবাবে মো. রুহুল আমিন বলেন, সমস্যা হলে সবারই হবে আমার একার নয়। আর আমিও চাই স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা হোক। তিনি বলেন হয়ত এবছর আমরা শিক্ষার্থীদের বেশী গাইড করতে পারি নি তাই এ(+) পাওয়া হয় নি। তবে এরপর আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিব। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশী অর্থ আদায় বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ফি তো একটু বেশী হবেই। হল ম্যানেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারসহ পরীক্ষার্থীদের নকল ও শিক্ষক দ্বারা প্রশ্নের সমাধান দেয়া ও অন্যান্য বিষয়ে যে অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বক্তব্য প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
লালমোহন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের কাছে এসএসসিতে কাঙ্খিত ফল অর্জিত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এবারের পরীক্ষা গ্রহণ ভিন্ন ভাবে হয়েছে। কঠোর নজরদারী আর নকল ও সুযোগ সুবিধা মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ফল পেয়েছে। লালমোহন হা-মীম একাডেমির এ(+) বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হা-মীম একাডেমির অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। তাদের এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি নেই। তার অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরীক্ষা দেয়ায় এবং তাদের স্টুডেন্ট বলে পাবলিসিটি করে। হা-মীম একাডেমি পরীক্ষার হল ম্যানেজ করে তাদের পরীক্ষার্থীদের এক্সট্রা সুবিধা দেয় এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, যদিও তারা তা অতীতে করে থাকে তবে এবছর থেকে তা আর করতে পারবে না। শিক্ষার্থীকে পড়াশুনা করে পরীক্ষার হলে আসতে হবে এবং তার যোগ্যতা অনুযায়ী সে ফল পাবে।
লালমোহনে এসএসসির ফল বিপর্যয়ের কারণ কি এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামছুল আরিফ বলেন, এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে পরীক্ষা নেয়ার ধরণ ছিল ভিন্ন। কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে এবং সিসি ক্যামেরার আওতায় পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র গুলোতে নকল মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এটিই পরিপূর্ণ রেজাল্ট লালমোহন উপজেলার জন্য। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উচিত এই ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা।