সোমবার, ১৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন | শিরোনাম | সর্বশেষ » চরফ্যাসনে প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে জালিয়াতি
চরফ্যাসনে প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে জালিয়াতি
লালমোহন বিডিনিউজ ,সিরাজ মাসুদ : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিনব নগর ইউনিয়নের ২নং চর মোতহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে । বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধমে মোঃ এমরান হোসেনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন । এমরান হোসেন বিদ্যালয়ে নিয়মিক ক্লাস করে আসলেও বর্তমান সরকার রেজিষ্ট্রারী বিদ্যালয়গুলো কে সরকারী ঘোষণা করার পর দালাল চক্রের মুল হোতা আমিনাবাদ মাদারতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাসসহ প্রভাবশালীদের কুনজর পরে ঐ বিদ্যালয়ের উপর।
তাই তারা নিয়োগকৃত শিক্ষক এমরানের তালিকা ফুরুপ দিয়ে মুছে ঝালকাঠির রোকসান বেগমের নাম, রাশিদার পরিবর্তে কানিজ ফাতেমার নাম , পশ্চিম চর লিউলিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা আমেনার পরিবর্তে মোঃ রফিকুল ইসলামের নাম অন্তভ’ক্ত করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক এমরান বাদী হয়ে গত ১৯.৫.১৬ তারিখে হাই কোর্টে একটি রিট করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রধান শিক্ষক এমরানসহ , বাকি ৪ জন সহকারী শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস করে আসছে। রোকসানা বেগম, কানিজ ফাতেমা এবং রফিকুল ইসলাম নামের কোন শিক্ষককে তারা ঐ বিদ্যালয়ে কোন দিন দেখেননি বলেও জানান স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগি ২নং চর মোতহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমরান হোসেন বলেন,২০১০ সালের ০২.০৮.তারিখে বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার নিয়োগের মাধ্যমে আবেদন করি এবং ২৫.০৮.২০১০ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করি। যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন দালাল চক্রের মুল হোতা আব্বাসউদ্দিন বিদ্যালয় সরকারী করে দেওয়ার কথা বলে আমাদেরকে বিভিন্ন দপ্তরের চিঠি এনে দেখান এবং টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ার কারনে তারা দৈনিক সোনালী বার্তা পত্রিকায় ২৯/১২/২০১১ ইং তারিখে ৪র্থ পৃষ্ঠায় উত্তর চর মোতাহার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,সাং চর মোতাহার, পোঃ নুরাবাদ, উপজেলা চরফ্যাসন, জেলা ভোলা একটি আবশ্যক ভূয়া বিজ্ঞপ্তির দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকার জাল জালিয়াতি করে আমার নামের পরিবর্তে জালকাঠির রোকসানা বেগম নামের এক মহিলার নাম অন্তরভুক্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানার পর দৈনিক সোনালী বার্তার সম্পাদকের স্বরনাপূর্ণ হলে উল্লেখিত ঐ তারিখে দৈনিক সোনালী বার্তা অফিস সংরক্ষিত কপিতে উত্তর চর মোতাহার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কোন আবশ্যক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়নি বলে একটি প্রত্যায়ন পত্র দেন সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম পালোয়ান জানান , আমিনাবাদ বাদারতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস এই ঘটনার মুল হোতা হিসেবে আমরা জানার পর তাকেঁ ডেকে এনে জানলাম রোকসানা নামের যে মহিলাকে ভুয়া নিয়োগ দেখানো হয়েছে। আসলে সে ভোলা জেলার কোন বাসিন্দার না । তিনি আরো জানান, মহিলারা চাকুরী করতে হলে তাকে হয় বাবার ঠিকানা না হয় স্বামীর ঠিকানা থাকতে হয়। কিন্তু রোকসানার বাবার ঠিকানা ঝালকাঠি স্বামীর ঠিকানা আমরা জানি না। মুল ¯্রতদ্বারার শিক্ষকের নিয়োগরে দাবি করেন আবুল কালাম পালোয়ান।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল হাই জানান, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কানিং করে যারা মুল শিক্ষক (এমরান) এদেরকে বাদ দিয়ে রোকসানা সহ আরো তিন জন শিক্ষকের নাম অন্তরভুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া শিক্ষকের শাস্তির দাবি করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইফুল্লাহ জানান, আমি পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক এমরান সহ যে চার জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি এরাই প্রকৃত শিক্ষত । আর বাকি যারা শিক্ষক দাবি করে তারা আসলেই কোন শিক্ষক না আমি এদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে দালাল চক্রের মুল হোতা আব্বাস উদ্দিন, কানিজ ফাতেমা, রোকসানা ও মোঃ রফিকুল ইসলাম বিষয়টি অস্কীকার করেন।
মুজিব নগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল অদুদ মিয়া জানান, বিদ্যালয়টি যখন বেসরকারী ছিল তখন প্রধান শিক্ষক এমরান সহ নিজেদের অর্থায়নে মাটি কেটে মাঠ ভরাট করেছে। এর পর যখন বিদ্যালয়টি সরকারী হলো তখন একটি চক্র তাদের নাম বাদ দিয়ে ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে নিয়োগ নেয়ার পায়তারা করছে। আসরে তারা কখনো এই বিদ্যালয়ে আসেনি।
চরফ্যাসন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুস সালাম জানান, রোকসানা যে দাবিটি করছেন এটি আমি যোগদান করার অনেক আগের ঘটনা। তারা আমার পূর্বের শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে মুল ¯্রতদ্বারা শিক্ষকদের নাম বাদ দিয়ে জৈনেক রোকসানার নাম অন্তরভুক্ত করে। যার জন্য ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হাই কোর্টে রিট করেন। যার কারনে আমার অথরিটি এবং উচ্ছ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে আমি সরেজমিনে গিয়ে সঠিক রির্পোট পেস করি। যার জন্য রোকসানা আমার বিরুদ্ধ নানা অপপ্রচার চালচ্ছে। তিনি আরো বলেন , যেখানে রোকসানার বাড়ি হচ্ছে ঝালকাঠি সে কিভাবে এই শিক্ষক দাবি করে এটা আমার জানা নেই।
অপর দিকে বিভিন্ন অনিয়ন করে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরাধিরা।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা হবে দালাল ও দূর্নীতি মুক্ত এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।