শনিবার, ১৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | শিরোনাম | সর্বশেষ » মুক্তিযোদ্ধা তালিকা কমপক্ষে চল্লিশ লাখ
মুক্তিযোদ্ধা তালিকা কমপক্ষে চল্লিশ লাখ
লালমোহন বিডিনিউজ,সিরাজী এম আর মোস্তাক : সম্প্রতি মুক্তিযুুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, মাঠ পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই করা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ২০ মের মধ্যে জামুকা-তে না পৌছলে আগামী অর্থবছর থেকে সম্মানী ভাতা বা উৎসব ভাতা দেয়া হবেনা। (দৈনিক প্রথম আলো, ১১ মে ২০১৭, পৃষ্ঠা-৫)। বর্তমানে এ তালিকা নিয়ে চরম জগাখিচুরী চলছে। কর্মকর্তাগণ হিমশিম খাচ্ছেন। এর সহজ ও সুস্পষ্ট সমাধান দিয়ে গেছেন, বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আদর্শ না মানাতেই যত্তোসব সমস্যা। আসুন, আমরা বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ অনুসরণ করি এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা দূর করি।
বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্র্চে পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, “তোমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।” একইভাবে ১০ জানুয়ারী, ১৯৭২ তারিখে দেশে ফিরে সমগ্র জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং ঘোষণা করেন, “আজ আমার জাতি স্বাধীন হয়েছে। আমার স্বপ্ন-সাধ পূর্ণ হয়েছে। তোমরাই দেশ স্বাধীন করেছো। তোমরাই ত্রিশ লাখ প্রাণ দিয়েছো এবং দুই লাখ সম্ভ্রম হারিয়েছো। তোমাদেরকে স্যালুট। তোমরাই মুক্তিযোদ্ধা।” বিস্তারিত বক্তব্য অনলাইনে শুনতে ক্লিক করুন-
-(https://www.youtube.com/watch?v=ExL5YvTCxCw) A_ev (https://www.youtube.com/watch?v=CXKlLJB9O8E)|
আমরা জাতির জনকের এ ঘোষণা ভূলে গেছি। মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে পড়ে আছি। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা বিভাজন ছিলনা। কারো জন্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বা কোটা সুবিধা ছিলনা। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৬৭৬ জন যোদ্ধাকে বিশেষ খেতাব দিয়েছেন। মাত্র সাতজন শহীদকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দিয়েছেন। এছাড়া শহীদ-গাজী নির্বিশেষে দেশের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি নিজেও একজন বন্দী মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়েছেন। এটাই জাতির জনকের মুক্তিযোদ্ধা নীতি।
আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর নীতিচ্যুত হয়েছি। ফলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা-নীতি অনুসারে বর্তমানে এ তালিকা কোনোভাবেই চল্লিশ লাখের কম নয়। তাহলো, বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন অবশ্যই সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রায় পাঁচ লাখ যুদ্ধবন্দীও মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত ও তালিকাভুক্ত প্রায় দুই লাখ ব্যক্তিও মুক্তিযোদ্ধা। আর কমপক্ষে এক লাখ ভারতীয় সম্মুখ যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির যোগ্য। তাদের প্রচেষ্টা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অসম্ভব ছিল। এ চল্লিশ লাখ ছাড়াও যুদ্ধকালে দেশে অবস্থানকারী কোটি কোটি বাঙ্গালি সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের স্বীকৃতি না দিলেও অন্তত উক্ত চল্লিশ লাখ মুক্তিযোদ্ধার কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ষোল কোটি নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এ চল্লিশ লাখ তালিকা অত্যাবশ্যক।
পৃথিবীর কোথাও শহীদ, বন্দী, আহত, পঙ্গু এবং গোয়েন্দা হিসেবে ছদ্মবেশধারী সহযোগীদেরকে যোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়ার নজির নেই। তেমনি শহীদ ও যোদ্ধার অনুপাত ত্রিশ লাখ ও দুই লাখ, এতো ব্যবধান নেই। ত্রিশ লাখ শহীদের তুলনায় মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা কোনোভাবেই মানায় না।
সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে সৃষ্ট জখাখিচুরী কাটাতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা-নীতিই একমাত্র ভিত্তি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে কারা এ নীতি অনুসরণ করে, তা দেখার বিষয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক স্বীকার করেনা, তারা উক্ত চল্লিশ লাখ তালিকা মানবেনা। মূলত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা কে আাছে? তাই যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা অবশ্যই স্বাধীনতার স্থপতি বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা-নীতি অনুসরণ করবে। তারা চল্লিশ লাখ তালিকা ভিত্তি ধরে দেশের আপামর জনতাকে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের সন্তান স্বীকৃতি দেবে।