বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » জেলার খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » জুতা সেলাই এবং পলিশের কাজ করে চলে ওদের জীবিকা।।লালমোহন বিডিনিউজ
জুতা সেলাই এবং পলিশের কাজ করে চলে ওদের জীবিকা।।লালমোহন বিডিনিউজ
জাহিদ দুলাল,লালমোহন বিডিনিউজ : ভোলার লালমোহন উপজেলার অন্তত ১০০জন মুচি চরম অভাব-অনটনে দিনপার করছেন। বারো মাসেই তাদের দুঃখ যেন লেগেই থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করেন এসব মুচিরা। তারা জুতা সেলাই এবং পলিশ করেন। শীতের মৌসুমে এসব মুচিদের কাজ ভালো থাকে। অন্য সময়গুলোতে তেমন কোনো কাজ থাকে না তাদের।
জানা গেছে, লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০০জনের মতো মুচি রয়েছেন। এরমধ্যে পৌরসভায় আছেন মোট ১৯জন মুচি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুচি লালমোহন উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন সড়কের পাশের ফুটপাতের টং দোকানে বসেন। তারা প্রকারভেদে একটি জুতা সেলাই করলে পান ১০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। আর জুতা পলিশ করলে প্রকারভেদে পান ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
ওই এলাকায় দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে জুতা সেলাই এবং পলিশের কাজ করেন উকিন্দ চন্দ্র রবিদাস। তার বয়স প্রায় ৪৫ বছর। উকিন্দের বাড়ি লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিগঞ্জ এলাকায়। তার সংসারে স্ত্রীসহ দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে।
উকিন্দ চন্দ্র রবিদাস বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮ টায় এসে দোকান খুলি। আবার রাত ৮ টায় দোকান বন্ধ করে বাড়িতে ফিরি। এই পুরো দিনে জুতা সেলাই এবং পলিশ করে আড়াইশত থেকে তিনশত টাকা উপার্জন করতে পারি। যেখান থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ বাদে দেড়শত থেকে দুইশত টাকার মতো লাভ হয়। এই আয় দিয়েই স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। আবার এনজিওতে ঋণও রয়েছে ৩০হাজার টাকা। ওই ঋণের প্রতি সপ্তাহে কিস্তি ১১শত টাকা। এতে করে বারো মাসেই অভাবে থাকি। যার জন্য কোনো রকমে চাল কেনার পর কখনো কখনো আর সবজি বা মাছ কেনা হয় না। এজন্য প্রায় সময়ই খাবারে থাকে ডিম-ডাল। এতো কষ্টে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিনপার করছি, তবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। হয়তো আমাদের খবর কেউই রাখেন না।
ভূমি অফিস সংলগ্ন ফুটপাতের আরেক মুচি অরুন রবিদাস। তার বয়স ৩৮। তবে অভাবের সংসারে খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি জড়িয়েছেন এই পেশায়। গত ২২ বছর ধরে মুচির কাজ করছেন তিনি। তার সংসারে স্ত্রীসহ ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে দুইজন পড়ালেখা করে। মুচি অরুন রবিদাসের প্রতিদিনের গড় উপার্জন সাড়ে তিনশত টাকার মতো। যেখান থেকে খরচ বাদে তার আয় প্রায় দুইশত টাকা। তবে তিনটি এনজিওতে মোট দেড় লাখ টাকা ঋণ রয়েছে অরুনের। এই ঋণের টাকা নিয়ে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ওই ঋণের দেড় লাখ টাকার প্রতি সপ্তাহে কিস্তি ৩৯শত টাকা।
মুচি অরুন রবিদাস জানান, রোদ-বৃষ্টি যতই হোক, কখনো কাজ বাদ দিতে পারি না। কারণ কাজ না করলে খেতে পারবো না। এজন্য প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি। এই কাজের বিনিময়ে প্রতিদিন গড়ে উপার্জন করি সাড়ে তিনশত টাকা। যেখান থেকে লাভ হয় দুইশত টাকা। এই আয়ের টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি, সংসারের খরচ এবং সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাই। যার জন্য কোনোভাবেই অভাব পেছন ছাড়ছে না। এজন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
অন্যদিকে এই স্থানের মুচি বাবুল চন্দ্র দাসের গল্পটা ভিন্ন। তার বয়স প্রায় ৬৮ বছর। তিনি গত ২৬ বছর ধরে ঢাকায় মুচির কাজ করতেন। গত এক বছর আগে লালমোহন এসে মুচির কাজ শুরু করেন বাবুল চন্দ্র। তার বোন জামাই মারা যাওয়ায়ই তিনি মূলত এখানে এসেছেন। বোন জামাইয়ের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েন স্বামীহারা বৃদ্ধ বোন। ওই বৃদ্ধ বোনের সংসারের হাল ধরতেই লালমোহনে এসে গত এক বছর ধরে মুচির কাজ করছেন বাবুল চন্দ্র। তার স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকায়। লালমোহনে থেকে মুচির কাজ করে বোনের এবং নিজের সংসার চালাচ্ছেন বাবুল চন্দ্র দাস।
এমন অভাব-অনটনের জীবন কেবল উকিন্দ চন্দ্র রবিদাস, অরুন রবিদাস এবং বাবুল চন্দ্র দাসেরই না। এই উপজেলার অন্যান্য সব মুচিদেরই অভাবের জীবন। কঠোর পরিশ্রমেও তারা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারছেন না। দিন যত যাচ্ছে সংসার চালাতে গিয়ে ততই তারা ধারদেনায় জড়াচ্ছেন। এজন্য লালমোহন উপজেলার সকল মুচিরা সরকারের কাছে আর্থিক এবং চাল বরাদ্দ প্রদানের অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওইসব মুচিরা যোগাযোগ করলে তাদের সমস্যা জেনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।