মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ভোলা | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » ভোলায় ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ, হুমকির মুখে পরিবেশ।। লালমোহন বিডিনিউজ
ভোলায় ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ, হুমকির মুখে পরিবেশ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে ঝিকঝাক ইটভাটার আড়ালে লাকড়ি ব্যবহার করে চিমনি ছাড়া পাজা দিয়ে ইট পোড়ানোর অভিযোগ ওঠেছে খান ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার বিরুদ্ধে। এতে আশপাশের কৃষি জমিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ইটভাটার মালিক সামনে কয়লা দিয়ে লোক দেখানো ইট পুড়লেও পিছনে করাত কল বসিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট পুড়ছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন এভাবে ইট পোড়ানোর ফলে ইটভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
খান ব্রিকসে গিয়ে দেখা গেছে, ভাটায় প্রবেশ পথের সামনে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। দেখলে মনে হবে সকল নিয়ম মেনেই ইট পোড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ইটভাটার পিছনের অংশে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেখানে পড়ে আছে হাজার হাজার মন গাছের গুড়ি। পাশেই করাত কল। আরেক পাশে চতুর্ভূজ আকৃতির একটি পাজা রয়েছে। সেখানে থাকা এক জন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ পাজায় এ লাখ ইট রয়েছে। যা এক দিন আগে পোড়ানো শেষ হয়েছে। এটা ভেঙে ইট বের করা হবে। কয়লা থাকতে কেনো অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে ওই শ্রমিক জানান, কয়লায় খরচ বেশী, আর পাজায় ইট পুড়তে খরচ কম তাই মালিক সামনে কয়লা দিয়ে পুড়ে। পিছনে কাঠ দিয়ে পুড়ে। তবে এ শ্রমিক জানান, অনেক ইট ভাটায় খরচ কমানোর জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রকার চিমনি ছাড়াই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে ওই এলাকার ফসলের মারত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি আশপাশের পাছপালাও মরে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
এ বিষয়ে খান ব্রিকসের মালিক আবুল কালাম খান পাজা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, এভাবে ইট পোড়ানো অবৈধ। কিন্তু তিনি পরীক্ষামূলক এক লাখ ইট পুড়িয়েছেন। সামনের দিকে আর পোড়াবেন না।
শুধু খান ব্রিকসই নয়, ভোলা জেলার প্রায় শাতাধিক ইট ভাটায় এবার কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। জেলায় মোট ১২০টি ইটভাটার মধ্যে হাতেগনা ১৫ থেকে ২০টি ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পুড়লেও বাকী ভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ছে। এমনটি এসকল ভাটায় সরকারি সংরক্ষিত বনের কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
এতে করে একদিকে যেমন ধ্বংশ হচ্ছে সবুজ বন অন্যদিকে কাঠের ধোয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে আশপাশের পরিবেশ। সম্প্রতি ভোলার সদর ও চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, দুই চারটি ইটভাটা বাদে প্রায় অধিকাংশ ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইট পোড়ানোর জন্য একেকটি ইটভাটায় হাজার হাজার মন লাকড়ি স্তুপ করে রাখা রয়েছে। আবার অনেক ইটভাটায় স-মিল বসিয়ে কাঠ কাটছেন।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্ব বেশ কয়েকটি ইট ভাটায় ইতোমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসময় বৈধ লাইসেন্স না থাকা ও কাঠ পোড়ানোর দায়ে জরিমানা করার পাশাপাশি কিছু ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর পাজা দিয়ে ইট পোড়ানোর বিষয়টি তিনি জেনেছেন। শিগ্রই সেখানে অভিযান চালানো হবে।
ইট ভাটায় অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর বিষয়টি ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরীকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে বলেন।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।