শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ভোলা | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি।।লালমোহন বিডিনিউজ
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : পুব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবী সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে। চারদিক পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত। এমনই পরিবেশে কৃষকের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ছাঁটে গৃহিণীরা। পাখির কিচিরমিচির ডাকের সঙ্গে ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ ভেসে বেড়ায় কৃষকের আঙিনায়।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। এক সময় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি লুকিয়ে ছিল আমাদের গ্রামবাংলার প্রাচীন জনপদে। ভোরের আজানের পাশাপাশি স্তব্ধতা ভেঙে ঢেঁকির শব্দ ছড়িয়ে পড়ত গাঁও গ্রামের চারদিকে। এখন সেই শব্দ নেই।
চোখে পড়ে না বিয়ে শাদির উৎসবের ঢেঁকি ছাঁটা চালের ফিরনি-পায়েস। অথচ একদিন ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করাও কঠিনতর ছিল। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি। কিন্তু আজ তা আমাদের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও মাঝে মধ্যে গ্রামীণ জনপদে কিছু উৎসব-পার্বণে ধান থেকে আতপ চাল তৈরি করতে পিঠা বানাতে, চালের গুঁড়ি তৈরি করতে গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ ঘরে পুরনো ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ শোনা যায়।
আত্মীয়স্বজন একসঙ্গে ঢেঁকিতে বারা ভেনে যে আনন্দ পেয়ে থাকে তা কলে ছাঁটায় পাওয়া কখনও সম্ভব নয়। এখন শিক্ষার প্রসার গ্রামেও কমবেশি হয়েছে। গ্রামের বউ-ঝিরা বলতে গেলে প্রচলন না থাকাই অবশ্য। ঢেঁকিতে বারা ভানা প্রায় ভুলেই গেছে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া বৃদ্ধা বা বয়স্ক মহিলারা গর্ব করে বলত এই ঢেঁকি আমার দাদাশ্বশুরের আমলের।
শীতকালের পাখিডাকা ভোরে নবান্নের আনন্দে মেতে উঠত অজপাড়াগাঁ। এ সময় ঢেঁকির শব্দ কৃষককে মাঠে যাওয়ার জন্য তাড়া দিত। গ্রাম বাংলার ঘোমটা পরা বধূরা বিভিন্ন কায়দা-কানুনে ঢেঁকির তালে তালে তাদের বাপ-দাদার আমলের গীত গেয়ে চলত। কিন্তু এখন সর্বত্রই অসংখ্য যান্ত্রিক ধান ভাঙার মেশিন ঢেঁকির সেই মধুময় ছন্দ কেড়ে নিয়েছে। গ্রামীণ জনপদেও সেই কর্ম চঞ্চলতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে এ যন্ত্র।