শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » বিনোদন | শিরোনাম | সর্বশেষ » ধর্ষকদের অনুশোচনা নেই, শুধু শেষ হয়ে যায় ধর্ষিতরা
ধর্ষকদের অনুশোচনা নেই, শুধু শেষ হয়ে যায় ধর্ষিতরা
লালমোহন বিডিনিউজ :এ এক বিদূষির সত্যি কাহিনি৷ শুধু দেশ নয়, বিশ্বের কাছে যে পরিচিত ‘বিটিয়া’ নামে৷ চার ধর্ষকের অত্যাচারের শিকার সেই দলিত কিশোরী এখন উত্তরপ্রদেশের অত্যাচারিত, ধর্ষিত মেয়েদের লড়াইয়ের প্রেরণা৷আর ধর্ষকদের আতঙ্ক |
অখ্যাত গ্রামের দলিত কন্যার লড়াইয়ের এই কাহিনি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও৷ স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া অস্টিন মেয়র তার একটি বক্তৃতায় বিটিয়ার লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন৷কিন্তু কী তার লড়াই? তার উত্তর, এই লড়াই নারীর সম্মানের, অধিকারের, ন্যায়ের৷
ষোড়শী বিটিয়া তার জীবন দিয়ে বুঝেছে, উত্তর-ভারতের বিভিন্ন্ রাজ্যে উচ্চবর্ণের লোকেরা নিরি্ধায় দলিত মেয়েদের ধর্ষণ করে৷ মেয়েরা আর তার পরিবার শেষ হয়ে যায়৷ কিন্ত্ত বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয় না উচ্চবর্ণের ওই লোকেদের৷ তারা একের পর এক মেয়েদের ধর্ষণ করে৷ আর এই অন্যায় আটকানোর অন্যতম পথ শাস্তি৷ কারণ, ওই ধর্ষকরা জানে তাদের কোনও শাস্তি নেই৷ অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরবে তারা৷ কাঁদবে শুধু অত্যাচারিত নারীরা৷ এই অন্যায়ের বিরুে হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রুখে দাঁড়িয়েছে বিটিয়া৷১৩ বছর বয়সে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রামের উচ্চবর্ণের চারজন তাকে ধর্ষণ করেছিল৷ সেই ছবি তুলে রেখেছিল ভিডিওতে৷ ভয় দেখিয়েছিল, মুখ খুললে ছড়িয়ে দেবে ভিডিও৷ প্রাণে মেরে দেবে ভাইকে৷
গ্রামের অন্য নির্যতিতা নারীদের মতোই মুখ বন্ধ রাখতে হয়েছিল বিটিয়াকেও৷ কিন্ত্ত এর এক মাসের মধ্যেই বিটিয়ার বাবা দেখেন পাড়ার একটি ছেলে মোবাইলে ভিডিও দেখছে৷ দেখা যায় সেটা বিটিয়ার অত্যাচারিত হওয়ার ভিডিও৷ যে ভিডিও বিক্রি করা হয়েছে মোটা টাকায়৷ এরপর আর চুপ থাকতে পারেনি বিটিয়ার পরিবার৷ পুলিশের দ্বারস্থ হয় তারা৷ কিন্তু সাহায্য করেনি পুলিশ ৷ উল্টে ঘটনা জানাজানি হতেই, স্কুল ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বিটিয়াকে৷ গ্রামের মাতববরদের বিধানে রেশন-সহ সরকারি সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় বিটিয়ার পরিবারের জন্য৷ ১৩ বছরের বিটিয়ার দিকে আঙুল তুলে বলা হয়, ‘ও নষ্ট চরিত্রের মেয়ে৷’ প্রবল মানসিক চাপ সেই সঙ্গে আর্থিক অনটন৷ তবু হার মানেনি বিটিয়া৷ শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ কিন্তু জামিনে তারা ছাড়া পেয়ে যায়৷
এভাবেই চলে আরও তিন বছর৷ শুনানি চলার সময় মারা যান বিটিয়ার বাবা৷
পরে অবশ্য তার পাশে দাঁড়ান নারী অধিকার নিয়ে লড়াইকারী আর এক মহিলা মাধবী কুকরেজা৷ বিটিয়ার কথায়, “আমার ভাইকে ওরা মেরে দেবে হুমকি দিয়েছিল৷ ভয়ে ভাইকে আমরা বেরোতে দিতাম না৷ এদিকে খাওয়ারও কিছু ছিল না৷ প্রচণ্ড কষ্টে দিন কেটেছে৷” আর্থিক অনটন যখন চরমে তখন ধর্ষকদের পরিবার থেকে ১৫ হাজার টাকা ‘অফার’ করা হয় বিটিয়ার পরিবারকে৷ শর্ত, মামলা তুলে নিতে হবে৷ একসঙ্গে এত টাকা কখনও দেখেইনি বিটিয়া৷ তবুও চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি সে৷ বিটিয়ার কথায়, ” আমি ওদের জেলে ভরতে চাই৷ শাস্তি পাক দেখতে চাই৷”
১৬ বছরের এক দলিত পরিবারের মেয়ের এই অদম্য জেদ নাড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের ভিত৷ সেই গ্রাম যেখানে পুরুষরা মনে করে, সমস্যা মেটাতে ধর্ষকদের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়া উচিত৷ কারণ, কোনও মেয়েকে ভাল লাগে বলেই তাকে ধর্ষণ করার কথা ভাবে কেউ৷ গ্রামের লোকের এ হেন মানসিকতায় হতবাক নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী মাধবী কুকরেজাও৷ তাঁর আশা, বিটিয়ায় পারবে এর বদল ঘটাতে৷ অন্য মেয়েদের সচেতন করতে৷সংবাদ প্রতিদিন।