মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » বিবিধ » স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য লালমোহনের ৫ মোড়লের কাছে জিম্মি শিক্ষকরা
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য লালমোহনের ৫ মোড়লের কাছে জিম্মি শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার জরিপের নামে বেতন ভাতাবিহীন অসহায় শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মাদরাসা কমিটির স্ব ঘোষিত নেতা নূরুল ইসলাম মৌলভী, শাহে আলম মাওলানা, আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা সাদেক, ইউসুফ শরীফ নামের পাঁচ মোড়ল। জরিপে ভাল ফলাফল দেখালে অতি দ্রুত এসব মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণ হয়ে যাবে বলে জরিপকালীন অফিস খরচ ও অন্যান্য খাত দেখিয়ে বেতন-ভাতা বিহীন অসহায় শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। কোন শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জরিপ থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হতে পারে বলে এ পাঁচ মোড়লের ফাঁদে আটকে গেছেন শিক্ষকরা।
সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ২৩৮ টি। সম্প্রতি স্বতন্ত্র মাদরাসার প্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম পরিদর্শনপূর্বক তথ্য চেয়েছে সরকার। এটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজের কথা বলে মাদরাসা অংক ধার্য করে স্ব ঘোষিত কমিটির এ পাঁচ মোড়ল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার কয়েকজন প্রধান জানান, জরিপে ভাল ফলাফল দেখাতে অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি মাদরাসা থেকে দশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার্য করেছে ওই মোড়লরা। এরমধ্যে যে সকল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে সেসব মাদরাসার জন্য ১৫ হাজার ও যেসব মাদরাসার কোন শিক্ষার্থী সমাপনিতে অংশগ্রহণ করেনি সেসব মাদরাসার জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। যেহেতু মাদ্রাসার নামটি জরিপের আওতায় আনতে হবে সেহেতু মুখ বুঝেই মোড়লদের হাতে এসব অর্থ তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নিজস্ব লোকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন তারা। উত্তোলনকৃত এসব টাকা জমা হচ্ছে নূরুল ইসলাম মৌলভীর কাছে।
শুধু তাই নয়, উপজেলার প্রায় স্বতন্ত্র মাদরাসার কাগজপত্র নিজের কাছে রেখে ওই সকল মাদরাসার নিযোগপ্রাপ্ত শিক্ষক/শিক্ষিকা থাকার পরও নতুন নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে নুরুল ইসলাম মৌলভীর বিরুদ্ধে। ওই সকল নিয়োগ পত্রে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে এসব নিয়োগ দিচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম মৌলভী বলেন, আমি কোন টাকা নিচ্ছিনা। এ দায়িতে¦ আমি ছাড়াও শাহ আলম মাওলানা, আবদুর রহমান চৌধুরী, সাদেক মাওলানা, ইউসুফ শরীফ ও আছে।
এব্যাপারে আলাপকালে মাওলানা শাহআলম জানান, আমরা মাদরাসা প্রতি ১০হাজার টাকা ধার্য করেছি। তবে এ টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আইয়ুব আলী জানান, কেউ টাকা নিচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।
উপজেলার মাদ্রাসা জরিপ কমিটির সদস্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেটুকু দায়িত্ব আমরা তা পালন করেছি। বিনিময়ে আমরা কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। যদি কেউ অফিস খরচের কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নজরে এনে দুর্নীতিবাজ এসকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী এমপি’র সূ-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষিকাগণ।