বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » তজুমদ্দিন | শিরোনাম | সর্বশেষ » মেঘনায় পড়ছে না ইলিশ, ঈদকে সামনে রেখে হতাশায় জেলেরা
মেঘনায় পড়ছে না ইলিশ, ঈদকে সামনে রেখে হতাশায় জেলেরা
তজুমদ্দিন সংবাদদাতা : মেঘনায় চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। তবুও জেলেদের জালে দেখা মিলছেনা রুপালি ইলিশ। দিনভর বিস্তৃর্ণ মেঘনায় জাল পেলে মাছ না পেয়ে অবশেষ খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে এখানকার প্রায় ১৫ হাজার জেলে পরিবার।
উপজেলার স্লুইজ ঘাট, চৌমহনী ঘাট, গুরিন্দা বাজার, কাটাখালিসহ বেশ কয়েকটি মাছ ঘাট ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
উপজেলার প্রায় ১৫-২০ টি মাছ ঘাট রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ইলিশের ভরা মৌসুমে এসব মাছ ঘাট গুলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠত। কিন্তু এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। মৌসুমের দুই মাস অতিবাহিত হলেও জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় বর্তমানে মাছ ঘাট গুলোতে বিরাজ করছে নিরবতা।
দীর্ঘদিন পর্যন্ত মাছ না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবতের দিন যাপন করছে জেলে পরিবার গুলো। ধীরে ধীরে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে ঋনের জালে। ইলিশ সংকটের কারণে ইলিশ আহরণ ও বাজার জাতকরণের সাথে জড়িত এ অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। মেঘনায় শুধু ইলিশ নয় অন্য মাছেরও দেখা মিলছেনা। তবুও দু’মুঠো অন্ন জোগাতে তাদের চেষ্টার কমতি নেই।
জেলে মোঃ জাকির জানান, ৮ জন লোক ৪ দিন ধরে নদীতে জাল ও নৌকা নিয়ে ঘুরে মাছ পাওয়া গেছে ১ টি। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। যে পরিমান মাছ পাওয়া যায় এতে লাভের পরিবর্তে গুনতে হয় লোকসান। বর্তমানে মাছ না পেয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয় আমাদের।
শুধু জাকির নয় এমন কথা বললেন তাজল, আলাম মাঝি, আনছারসহ বেশ কয়েকজন জেলে । আসন্ন ঈদ সামনে রেখে আনন্দ নেই এসব জেলে পরিবার গুলোর মাঝে। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ব্যস্ততা নেই ঈদের কেনাকাটা নিয়ে। ছেলে মেয়ে কিংবা পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনার অর্থ নেই তাদের হাতে।
স্লুইজ ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ রফিক সাদী জানান, বৈশাখ মাস থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও এখন পর্যন্ত জেলেদের জালে আশানূরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না। দৈনিক একটি নৌকা ২-৩ টির বেশী মাছ পায় না। আবার কেউ কেউ ফিরছে খালি হাতে। বিগত বছর গুলোর এমন দিনে স্থানীয় চাহিদা মিঠিয়ে এ ঘাট থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মাছ ঢাকা,ফরিদপুর, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হতো। বর্তমানে ইলিশ সংকটের কারণে এ ঘাট থেকে দৈনিক ১ লক্ষ টাকার মাছ ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে না।
বাতির খাল ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, এই ঘাটে আমার ৪০ টি নৌকায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দাদন রয়েছে। প্রতিদিন যে পরিমান মাছ পাওয়া যায় তাতে ২শ টাকাও আয় হয় না। ভরা এ মৌসুমে মাছ না পেয়ে চরম দুর্দিনে রয়েছে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আমির হোসেন বলেন, ইলিশ জলবায়ুর সাথে জড়িত। জলবায়ুর প্রভাবারে কারণে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। ইলিশ হলো গভীর পানির মাছ। চর পড়ে দিন দিন নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত জড় বৃষ্টি না হওয়ায় সাগর থেকে নদীতে মাছ আসছে না।