সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় | ঢাকা | বিভাগের খবর | রাজধানী | শিরোনাম | সর্বশেষ » ব্যাংকে টাকা আছে, তবে লুট করে খাওয়ার মতো নেই–প্রধানমন্ত্রী।। লালমোহন বিডিনিউজ
ব্যাংকে টাকা আছে, তবে লুট করে খাওয়ার মতো নেই–প্রধানমন্ত্রী।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। ব্যাংকে টাকা আছে তবে লুটে খাওয়ার মতো টাকা নেই।’
সোমবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ব্যাংকে টাকা নেই। আমি বলছি টাকা থাকবে না কেন, টাকা আছে তবে লুটে খাওয়ার মতো টাকা নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বে অনেক দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে পারছি। সারা বিশ্ব আজ অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বাজেটেই সরকারের উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, জনগণের চাহিদা ও আকঙ্ক্ষার প্রতিফলন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় ও ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। এই প্রাক্কলন সঙ্গত কারণেই একটু বেশি করা হয়। রাজস্ব হার প্রাক্কলনে অনেকটা উচ্চাভিলাসী হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। এটা সমৃদ্ধি আগামীর পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগায়। গত এক দশকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। কোনো মানুষের যদি উচ্চাভিলাস না থাকে, সে কিছু অর্জন করতে পারে না। বিগত বছরগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান এই কথাই প্রমাণ করে, আমাদের লক্ষ্যসমূহ সব সময়ই বাস্তবভিত্তিক ছিল। যা পরবর্তীতে বাজেট আলোচনায় বিস্তারিত বলার সুযোগ রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবতার কারণেই বাজেটের কিছুটা সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হয় এবং প্রতিবছরই আমরা এটা করে থাকি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে যেসব সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানসমূহের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল, পরবর্তীতে দেশীয় ও বৈশ্বিক নানা ঘটনার কারণে সেসব সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানসমূহের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেট প্রণয়নকালে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচনাগুলোর মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ অনুমান করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে অনুমান করছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আমরা সাফল্যজনকভাবে অতিক্রম করতে পারবো বলে আশা করছি। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অনুমান করা হলেও সংশোধিত মূল্যস্ফীতি ধার্য করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রাক্কলিত জিডিপি ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার পরিবর্তে কিছুটা হ্রাস করে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি যখন বৃদ্ধি পায় তখন মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, যেহেতু আমরা বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অত্যন্ত সতর্ক তাই সবসময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মূল বাজেটে রাজস্ব বাবদ প্রাক্কলিত তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা থেকে ২২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে তিন লাখ ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এরমধ্যে এনবিআর রাজস্ব বাবদ প্রাক্কলিত দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ননএনবিআর রাজস্ব বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত নয় হাজার ৭২৭ কোটি টাকা থেকে সংশোর্ধিত বাজেটে ১২৭ কোটি টাকা হ্রাস করে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত ৩৩ হাজার ২৫২ কোটি থেকে ছয় হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে ২৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে এক লাখ ৮৬ হাজর ৩০৫ কোটি টাকা রাজস্ব সংগৃহীত হয়েছে, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৯ শতাংশ। মূলত ভ্যাট আইন বাস্তায়ন বিলম্বিত হওয়া এবং আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কিছুটা হয়েছে। অর্থবছরের শেষে রাজস্ব সংগ্রহের গতিধারা বিবেচনায় নিয়েই মূলত রাজস্ব সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যয় প্রাক্কলন ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, ২২ হাজার ৩২ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় প্রাক্কলন চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা হ্রাস করে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে এক লাখ ৬৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংশোধিত বাজেটে হ্রাস পেয়েছে নয় হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়োনো হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে পরিচালন ব্যয়কে যৌক্তিকভাবে ন্যূনতম প্রবৃদ্ধি দিয়ে বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয় নিশ্চিত করার কারণে পরিচালন খাতে দক্ষতা অর্জন হয়েছে। তা মূলত উন্নয়ন বাজেটে অধিক হারে সম্পদ সঞ্চালনের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের যে অঙ্গীকার এবং কাঠামো রূপায়ণ করে বৃহৎ প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করার উদ্যোগ বলে অনুমিত হয়।
বাজেট প্রাক্কলনের সময় মোট বাজেট ঘাটতি সবসময় জিডিপি পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হয়। অনেক দেশে বাজেট ঘাটতি এরচেয়ে অনেক বেশি ধরা হলেও ধারাবাহিকভাবে আমরা পাঁচ শতাংশে ধরে রাখছি। তবে বাজেট বাস্তবায়নে প্রকৃত আয় ও ব্যয় হ্রাস পাওয়ার ফলে ঘাটতি কিছুটা কম হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রাক্কলিত এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা থেকে ৬৩৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত বাজেটে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। জিডিপির ৫ দশমিক শূন্য শতাংশের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। এই ঘাটতি ব্যয় আমরা মেটাবো বৈদেশিক উৎস থেকে নীট অর্থায়ন বাবদ ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নীট অর্থায়ন বাবদ ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা সঞ্চালনের মাধ্যমে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে যেসকল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায় সে সব খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ সংবলিত একটি সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। আর্থিক বিবৃতিতে দায়যুক্ত ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় প্রদর্শন করা হয়। সম্পূরক বাজেটে ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বরাদ্দ ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে নিট ২২ হাজার ৩২ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দে দাঁড়িয়েছে মোট চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ৩৭টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরীতে সম্পূরক মঞ্জুরি বরাদ্দের দাবি ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, এরমধ্যে দায়যুক্ত ব্যয় এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ১৪ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজেট যদি সঠিকই না হবে তাহলে মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এত উন্নয়ন করল কীভাবে। কেউ কেউ বলছেন, বাজেট দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যদি বাস্তবায়ন করতেই না পারতাম তাহলে, ২০০৮ সালে আমরা ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেয়েছিলাম, এবার বাজেট পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’