বোরহানউদ্দিনে মিথ্যে অভিযোগে ইউএনও’র বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন।। লালমোহন বিডিনিউজ

লালমোহন বিডিনিউজ, বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি : ভোলা বোরহানউদ্দিন উপজেলায় প্রায় ২ বছর ৯ মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আ.কুদ্দূস। তিনি যোগদানের পর থেকে এই উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুলের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে প্রত্যাক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিচয় বা অন্যকোন উপায়ে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গকরলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কখনোই পিছু হটেননি। তিনি এই উপজেলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। প্রতি মাসেই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভেজাল বিরোধীদের জেল জরিমানার মাধ্যমে অপরাধ নির্মূলে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
যার কারণে এখানকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছেন তিনি, তেমনি অপরাধী ব্যাক্তিদের কাছে বিরাগভাজনও হয়েছেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারী শনিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বোরহানউদ্দিন উপজেলার ইউএনও আব্দুস কুদ্দূসের নির্দেশে কক্ষ পরির্দশক শিক্ষার্থী গল্পের উত্তরপত্র নিয়ে আটকে রাখার এমন অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া সদ্য এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবাইয়াত ওয়াদুদ গল্প। রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দূসের বিচার দাবি করেন গল্প ও তার পরিবার। একইভাবে জেলা প্রশাসক বরাবরও লিখিত অভিযোগ দেন পরীক্ষার্থী গল্প ও তার পিতা শেখ ফরিদ,মা হুমায়ারা সুরভী। রুবাইয়াতের অভিযোগ, গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবসে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কনসহ সাহিত্য বিষয়ক প্রতিযোগিতায় সঠিক বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে তার উত্তর পত্র আটক করা হয়েছিলো বলে তিনি মনে করেন।
পরীক্ষা হলের কেন্দ্র সচিব শাহ্ মো. নোমান বলেন, বোরহানউদ্দিন আ.জব্বার কলেজ এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হলের আমি সচিবের দায়িত্ব পালন করছি। রুবাইয়াত ওয়াদুদ নামে কাউকে আমি চিনতামনা। পরদিন যখন শুনলাম আমার হলের একজন ছাত্র বোরহানউদ্দিন ইউএনও’ র বিরুদ্ধে ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরিক্ষা বর্জন করেছে। ঘটনা জানার পর খোজ খবর নিয়ে জানতে পারি ওই ছাত্রের নাম রুবায়াত ওয়াদুদ গল্প, তার রোল নং ১২২৩১১। সে হলের ১নং কক্ষে ২ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১ম পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলো। ওই ছাত্র বোরহানউদ্দিন ইউএনও’র বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই কক্ষে ৮৫ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় দিচ্ছে এবং এজন আরেকজনের উত্তর দেখার আপরাধে কক্ষ পরিদর্শক ২-৩ জনের উত্তর পত্র ৫ মিনিট আটক করে রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার শিক্ষকতার জীবনে প্রথম শুনলাম এরকম অহেতুক কারণে সাংবাদিক সম্মেলন করে পরীক্ষা বর্জন করতে এবং আমার মনে হয়, ইউএনওকে ফাঁসাতে কেউ ছাত্রটিকে ভুল বুঝিয়েছে। অারো এক শিক্ষক জানান, রুবাইয়াত ওয়াদুদ গল্প টগবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুর আহসান চৌধুরীর বোনের ছেলে। ওই চেয়ারম্যানের সাথে ইউএনও এর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। উপজেলা মাসিক সভায় কামরুল চৌধুরী আসেননা। বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সকল কর্মকান্ড তিনি বর্জন করে আসছেন, তারই ধারা বাহিকতায় মনেহয় তার বোনের ছেলের পরীক্ষাও বর্জন করিয়েছেন। মূলত বোরহানউদ্দিনে ইউএনও’কে বোকায়দায় ফেলতে এই আয়োজন! । বোরহানউদ্দিনের ইউএনও আ. কুদ্দূস জানান- গত রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা চলাকালে সরকারী আ.জব্বার কলেজ ( কেন্দ্র নং ১২১ ) বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করি। তখন ১নং কক্ষের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পাই কিছু পরীক্ষার্থী অন্য পরীক্ষার্থীর উত্তর পত্র দেখা দেখি করছিলো এবং উত্তর আদান প্রদান করার অপচেষ্টা রত ছিলো। সে জন্য এসব পরীক্ষার্থীদের উত্তর পত্র কিছুক্ষণ কক্ষ প্রত্যাবেক্ষকের রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে কক্ষে প্রবেশ না করেই চলে আসি। পরীক্ষার কেন্দ্রের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সু-শৃঙ্খল রেখে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য এরুপ লঘু শাস্তি প্রদান প্রচলিত স্বাভাবিক নিয়ম। ওই সময় যেসকল পরীক্ষার্থীদের উত্তর পত্র কক্ষ প্রত্যাবেক্ষক নিয়েছে চিনি নাই। এমনকি এখন পর্যন্ত তাদের এক জনকেও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি না। আমি সরকারী আ.জব্বার কলেজ কেন্দ্র থেকে চলে আসার সময় সঙ্গীয় কেন্দ্র সচিবকে উক্ত পরীক্ষার্থীদের উত্তর পত্র ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলি। ওই দিনের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেসবুক ) তার নিজস্ব পরীক্ষার্থীর উত্তর পত্র অন্যায় ভাবে জমা রাখা হয়েছে মনে করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উক্তরুপ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে অভিভাবক যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাতে বর্তমান সরকারের নকলমুক্ত, সুষ্ঠু ও সু-শৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথে কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনৈক সহকারী শিক্ষককে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান যে, ১নং কক্ষের কক্ষ প্রত্যাবেক্ষক উক্ত পরীক্ষার্থীদের উত্তর পত্র ৫-৬ মিটিট পরই ফেরৎ দিয়েছেন এবং অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ৯৫-৯৮ নম্বরের উত্তর লিখে যথারীতি ওই দিনের পরীক্ষা শেষ করে কক্ষ ত্যাগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একটি মহলের সাংবাদিক সম্মেলন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবে করছে সেটা উক্ত স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই করেছে।