শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » সিভিল সার্জনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী, লালমোহনে টাকা ছাড়া ছাড়পত্র দেননা ডাঃ মহসিন।।লালমোহন বিডিনিউজ
সিভিল সার্জনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী, লালমোহনে টাকা ছাড়া ছাড়পত্র দেননা ডাঃ মহসিন।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : মাত্র দুশত টাকা উৎকোচ না পেয়ে রহিমা বেগম (২০ ) নামের এক প্রসূতিকে ছাড়পত্র দেননি ভোলার লালমোহন সদর হাসপাতালের ডাঃ মহসিন। বাধ্য হয়ে রহিমা বেগম ভোলা সিভিল সার্জন কে অবহিত করলে ছাড়পত্র প্রদানে ডাঃ মহসিনকে নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন। কিন্তু সিভিল সার্জনের সে আদেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে ছাড়পত্র দেননি ডাঃ মহসিন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২০জুলাই) উপজেলার চরভুতা ৫ নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্র শাহে আলমের মেয়ে রাহিমা প্রসব বেদনা নিয়ে ভোর ৫ টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনুমান সকাল ১০টায় নরমাল ডেলিভারীতে তার সন্তান ভূমিষ্ট হয়। মা ও সন্তান সুস্থ থাকায় তাদের কে ওইদিন বিকেলেই ছাড়পত্র প্রদান করবেন বলে রোগীর স্বজনদের কে তার বাসায় যেতে বলেন ডাঃ মহসিন। কিন্তু বাসায় গেলে ছাড়পত্রের জন্য দু-শত টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রোগীর স্বজনদের ফিরিয়ে দেন ডাঃ মহসিন।
প্রসূতি রাহিমা বলেন, আমি ও আমার বোন বিকাল সাড়ে তিনটার সময় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: মো: মহসিনের বাসায় গেলে সে দুশো টাকা চায়। আমি দুশো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডা: মহসিন আমাদের সাথে দূর্ব্যাবহার করে। বাধ্য হয়ে ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানালে তারা বিষয়টি ভোলা সিভিল সার্জন ডা: রথিন্দ্রনাথকে অবগত করেন। ঘটনা শুনে ছাড়পত্রের জন্য পূনরায় ডা: মহসিনের কাছে যেতে বলেন সিভিল সার্জন। কিন্তু বিধি বাম। উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর অপরাধে রুগিকে ছাড়পত্র না দিয়েই আমাদের কে ফিরিয়ে দেন ডাঃ মহসিন। তাই ছাড়পত্র না নিয়েই শিশু বাচ্চা নিয়ে বাড়ি চলে আসি বলে জানান ভুক্তভোগী রাহিমা।
এ ব্যাপারে ডা: মহসিন বলেন, আমি ছাড়পত্রের জন্য টাকা চাইনি। তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, বিকাল সাড়ে তিনটায় কোন অধিকারে তারা আমার বাসায় গেল? মেডিকেল ডাক্তারদের ইমাজেন্সীতে থাকার কোন নিয়ম নেই। তারা বাসায় থাকবে এবং রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ইমাজেন্সীর মেডিকেল এসিস্টেন্টগণ মেডিকেল অফিসারদের কল করবে।
রাহিমা আরো বলেন, আমার ডেলিভারী হওয়ার পর দায়িত্বে থাকা নার্সরা আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে আমি তাদেরকে ১ হাজার টাকা দেই।
জানতে চাইলে হাসপাতালের নার্স পারভীন ২শ টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও অপর নার্স শাহানাজ বেগম ৮শত টাকার নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন আমার সাথে ফেরদাউস নার্সও ছিল।
ডা: মো: মহসিনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রাহিমা বেগম।
এদিকে হাসপাতালের ডাঃ মহসিন এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এখানে থাকতে চাইনা। আমার সাথের অনেক ডাক্তারগণ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থেকে ব্যাপক অর্থের মালিক হলেও আজ দু-বছর যাবৎ আমি এখানে পড়ে রয়েছি। এখান থেকে বদলী নিতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাকে বদলী করছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লালমোহন হাসপাতালের এই ডাক্তার।
অপরদিকে ডাঃ মহসিনের এমন বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ বিরাজ করছে উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে। সেবা নয় বরং অতি টাকা আয়ের লোভে বিতর্কের জন্ম দিয়ে এখান থেকে বদলী হতে চান ডাঃ মহসিন এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল। তাই সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেও সেবার নামে ব্যবসা করতে চাওয়া ডাঃ মহসিন কে বদলী নয় বরং তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। যাতে ভবিষ্যতে সেবাকে কেউ ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে না পারে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের টিএস ডা: রশিদ বলেন, আমি বিষযটি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিব।
সিভিল সার্জন ডাঃ রথিন্দ্রনাথ বলেন, বিষযটি আমি উর্ধ্ধতন কৃর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক ডা: মহসিন ও নার্সদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।