শনিবার, ২৬ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » বিভাগের খবর | রাজধানী | শিরোনাম | সর্বশেষ » মাকে ময়লার স্তুপে ফেলে গেল সন্তান! প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘরে জায়গা।। লালমোহন বিডিনিউজ
মাকে ময়লার স্তুপে ফেলে গেল সন্তান! প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘরে জায়গা।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শতবর্ষী গর্ভধারী এক বৃদ্ধা মাকে তার নিজের একমাত্র সন্তান বাড়ি থেকে বের করে পুকুর পাড়ে ময়লার স্তুপে ফেলে দিলেন। বৃদ্ধা মা বয়সের ভারে চলতে ফিরতে পারছেন না, একই স্থানে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো এবং মলত্যাগ করেন। তাই বউয়ের কথায় ময়লার স্তুপে মাকে ফেলে দেয় ছেলে।
এলাকাবাসী বলছেন, অসুস্থ মাকে চিকিৎসা তো দূরের কথা যে মা ১০ মাস সন্তানকে গর্ভে ধরেছেন, স্তন পান করিয়ে বড় করেছেন, সন্তানের সুখের জন্য নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন- তার সঙ্গে এমন আচরণের চিত্র দেখা তেঁতুলিয়াবাসী হতবাক।
তারা জানান, বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে ময়লার স্তুপে পড়ে থাকা বৃদ্ধার কান্না-কাটি আর আকুতি দেখে এলাকাবাসী সন্তানকে তার মাকে ঘরে তুলে নেওয়ার কথা বলেন। সে উল্টো প্রতিবেশীদের বলে, “ওই বুড়িকে নদীতে ফেলে দাও”।
এলাকাবাসী বৃদ্ধার এমন দূর অবস্থা দেখে সন্তানের বাড়ির পাশে সেই পুকুর পাড়ের ময়লার স্তুপে প্লাস্টিক আর ছেড়া বস্তা দিয়ে একটি ছোট চালা তৈরি করে দেন। সেখানেই ১৫ দিন ধরে ছিলেন বৃদ্ধা।
খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধায় তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ভজনপুর নিজবাড়ি গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে এমন অমানবিক দৃশ্যটি দেখতে পান শীর্ষনিউজের পঞ্চগড় প্রতিনিধি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ি থেকে ১৫ গজ দূরে ছোট চালার কুটির ভেতরে আকুতি আর আহাজারি করছেন শতবর্ষী বৃদ্ধা নেজামন। স্বামী মৃত সেকেত আলী। তার একমাত্র সন্তান নিজামদ্দীন (নাজিম)। নিজামদ্দীনের পাকা দালান বাড়িতে ৫টি কক্ষ রয়েছে। সেখান থেকে তার কপালে জুটেনি একটিও। বাড়ি থেকে ১৫ গজ দূরে ঝড়-বৃষ্টি আর মশার কামড়ে শরীর কাঁপছে বৃদ্ধা মায়ের। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সন্তানের চোখের সামনে দিনের পর দিন মৃত্যুর প্রহর গুণছেন নেজামন। গায়ে জ্বর, চোখেও দেখতে পান না। শুধু মাত্র কয়েকটি কাঠের তক্তার উপর একটি বস্ত্র নিয়ে কোনো মতে ঠেসদিয়ে বসে আর শুয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে কান্না আর আহাজারীতে বারবার বলছেন, ‘আমার আর এই কষ্ট সহ্য হয় না। প্রতিবেশী মৃত ছলিমদ্দীনের স্ত্রী শাহারা খাতুন সেই বৃদ্ধার কিছুটা দেখভাল করছেন।
বৃদ্ধার সন্তান নিজামদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘ওই বুড়ির সব-সময় ক্যান ক্যান আর কান্না আমার ভালো লাগে না।’
এলাকাবাসী সপিজুল হক, সলেমান আলী ও সপিকুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা নেজামনের এই অবস্থার কোনো কিছু না করা হলে ভবিষ্যতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা তা দেখে আমাদের সাথে এমনটা করতে পারে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর একটা সঠিক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানিউল ফেরদৌসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকাবাসীর মাধ্যমে একটি অভিযোগ দাখিলের কথা বলেন।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাষক জহুরুল হক জানান, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। আমি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সাথে কথা বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এর পর বিষয়টি জানা জানি হলে, শুক্রবার রাতেই (শীর্ষনিউজের প্রতিনিধি যাওয়ার) দু’ঘণ্টার ব্যবধানে ভজনপুর নিজবাড়ি গ্রামে দ্রুত ছুটে যান তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানিউল ফেরদৌস, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন আলীসহ ইউপি সদস্যরা। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাড়িতে জাইগা হয় বৃদ্ধা নেজামনের। তবে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ছেলে নিজামদ্দীন।
এমন অমানবিক ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে আইনের আওতায় নেওয়ার আগে এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রথমবারের মত তাদের ছেড়ে দেন। সেই সাথে বৃদ্ধা নেজামনকে ভবনের একটি কক্ষে জায়গা করে দেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধার জন্য সুকনো খাবার, পরণের বস্ত্র, তেল-চাল-ডালসহ নানা সামগ্রী তুলে দেন। একই সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার পরিবারকে আগামী রোববারের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণের জন্য টিন ও অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রতি দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্লটে জমি দেওয়া হলে সরকারি বরাদ্দে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এবং অসুস্থ বৃদ্ধা মহিলাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন।