বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | তজুমদ্দিন | রাজধানী | রাজনীতি | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » এখন দেশে বসবাস করাই দু:সাধ্য, যে কোন মূহুর্তেই অবসর নিতে পারি- মেজর হাফিজ ।। লালমোহন বিডিনিউজ
এখন দেশে বসবাস করাই দু:সাধ্য, যে কোন মূহুর্তেই অবসর নিতে পারি- মেজর হাফিজ ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম এককালের সাড়া জাগানো ফুটবলার, দৌড়বিদ ও মুক্তিযোদ্ধা।
রাজনীতি করছেন প্রায় ৩৩ বছর ধরে এবং এর মধ্যে সংসদ সদস্য ছিলেন প্রায় ২০ বছর।
বিরোধী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মিস্টার আহমেদ বিএনপি সরকারের সময় মন্ত্রী ছিলেন।
এর আগে খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ফুটবল প্রশাসনে জড়িত থাকার সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ও পরে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফিফা তাকে বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের সেরা ফুটবলারের সম্মানে ভূষিত করেছে।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে মিস্টার আহমেদ বলেন ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খেলা পাগল।
“সবসময় মাথায় থাকতো কিভাবে খেলা যায়। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স ছিলো আমার নেশা। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় ফুটবলার হিসেবে আমার নাম ছড়িয়ে পড়ে”।
পরে ঢাকা লীগে ফায়ার সার্ভিস দলের মাধ্যমে শুরু করে পরে মোহামেডান ক্লাবেও অধিনায়কত্ব করেছেন।
স্বাধীনতার আগে খেলেছেন পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়েও।
স্বাধীনতার পর ঢাকার মাঠে ডাবল হ্যাট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন রাজনৈতিক কারণে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় দলে ডাক পাননি কখনো।
তিনি বলেন, “১৯৭০ সালে ইরানে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই, আহত হই। পরে আবার খেলায় ফিরে আসি। ৭৩ সালে ডাবল হ্যাট্রিক করি।
দু খেলায় সাত গোল করেছিলাম। তখনি মারদেকা টুর্নামেন্টে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য জাতীয় দল নির্বাচিত করা হয়। কিছুদিন আগে পাকিস্তান জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনকে সেই দলে ডাকা হলোনা। কারণ আমার পিতা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন ও শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন”।
তিনি জানান পরের বছরেও তিনি ঢাকায় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন কিন্তু তারপরেও জাতীয় দলে ডাকা হয়নি রাজনৈতিক কারণে।
মিস্টার আহমেদ জানান ১৯৬৪,৬৫ ও৬৬ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে ১০০ ও ২০০ মিটারে অংশ নিয়ে দ্রুততম মানবের খেতাব অর্জন করি। ২০০ মিটারে তার রেকর্ড দশ বছর অক্ষুণ্ণ ছিলো। তিনি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ৬৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন নিয়েছিলেন দীর্ঘদিন খেলাধুলা চালিয়ে নেয়ার আশাতেই।
সেনাবাহিনীতে মাত্র আট বছর ছিলেন মেজর (অব:) হাফিজ। পরে ৭৫এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্যু- পাল্টা ঘটনার ধারাবাহিকতায় অবসর দেয়া হয় তাকে।
“১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাকে হত্যা করে। আওয়ামী লীগেরই আরেকটি অংশ ক্ষমতায় আসে। এসময় সেনাবাহিনীকে কয়েকটি বিদ্রোহ হয়। ৩রা নবেম্বর ঢাকা ব্রিগেডে ছিলাম। তখন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ক্যু হয়। একটি বড় অংশ এতে জড়িত হলো ডাকা ব্রিগেডের যেটি পরে সিপাহী বিদ্রোহের মুখে ব্যর্থ হয়। পরে আরও অনেকের সাথে আমাকেও অবসর দেয়া হয়”।
১৯৭১ সালের মার্চে যশোরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন ছিলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ৩০শে মার্চ বিদ্রোহ করেন সেখানে ও ৮ ঘণ্টা লড়াই হয় পাকিস্তানী সেনাদের সাথে।
“আমাদের সৈন্যরাই পাকিস্তানীদের ওপর আক্রমণ করি। জয় বাংলা চিৎকার করে শ্লোগান দিয়ে বিদ্রোহে অংশ নেই। মূহুর্তেই বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম”।
আট বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পরে রাজনীতিতে আসেন ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে। ২০ বছর ধরে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। ৯১ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হন।
২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর আবারো আলোচনায় আসেন মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
“সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য চেষ্টা করেছিলেন ফলে বিএনপির একটি অংশ সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত হয়। সাইফুর রহমান ও মান্নান ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো তৎপরতা শুরু হয়। এসময় সাইফুর রহমানের বাসায় একটি সভা হয় যেখানে আমি ছিলামনা। পরে পত্রিকায় দেখলাম সাইফুর রহমানকে চেয়ারম্যান ও আমাকে মহাসচিব করা হয়। এ সম্পর্কে আমার মতামত কেউ নেয়নি। এটি আমার ও বিএনপির কারও কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলোনা। বেগম জিয়া ভালো করেই জানেন কারণ তিনি যখন অন্তরীণ ছিলেন তার সাথে যোগাযোগ রেখেছি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। আমি মনে করি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছি। তাই এখনো বিএনপিতে আছি”।
রাজনীতি থেকে অবসর নিবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখার জন্য কিন্তু এখন দেশে বসবাস করাই দু:সাধ্য।
“আমি চিন্তা করছি যে কোন মূহুর্তেই অবসর নিতে পারি। আগামী নির্বাচনে অংশ নিবো কি-না সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেই। আমি মনে করি রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার জন্য এটিই সঠিক সময়”।
(সাক্ষাতকার নিয়েছেন সংবাদদাতা রাকিব হাসনাত)
সুত্রঃ বিবিসি