শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | জাতীয় | শিরোনাম | সর্বশেষ » রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিন-নিরাপত্তা পরিষদে কফি আনান ।। লালমোহন বিডিনিউজ
রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিন-নিরাপত্তা পরিষদে কফি আনান ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিন। অন্য দেশে আশ্রয়শিবির তাদের বাসস্থান হতে পারে না। মিয়ানমার সরকারকে উদ্দেশ্য করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এমন জোরালো আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। শুক্রবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন কফি আনান। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের মর্যাদা নিয়ে এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে দেশে ফিরতে পারেন। রাখাইনে সহিংসতায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রাজ্য পুনর্গঠনে তাদেরকে সহায়তা করতে হবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় অং সান সুচির সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তার প্রধান করা হয় কফি আনানকে। আগস্টে ওই কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করে কমিশন। এছাড়া তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কমিশন যেদিন ওই রিপোর্ট দেয় সেদিনই রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এর শুরু ২৫ শে আগস্ট। এর আগে থেকেই রাখাইনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ফলে ধরে নেয়া হচ্ছিল, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযান অত্যাসন্ন। ওই ২৫ শে আগস্ট ৩০ টি পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নামের রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থিরা। তার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অকথ্য নির্যাতন চালায়। গণধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ সহ এমন কোনো অভিযোগ নেই যা সেখানকার সেনাবাহিনী করে নি। এর ফলে বাধ্য হয়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন। এমন অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। অবরোধের দাবি ওঠে। জাতিসংঘ এই নৃশংসতাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করে। দাবি উঠেছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয় নি। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে। সেখানে কফি আনান বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়া রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নিয়ে কোনো ক্যাম্পে রাখা উচিত হবে না। তাদের বাড়িঘর ফিরে পেতে সহায়তা করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদের এমন আলোচনা ও দাবির প্রেক্ষিতে শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের মিশন কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি রাখাইনে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সহযোগিতা তদারকি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি রাখাইনের উন্নয়নও দেখাশোনা করবে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাষ্ট্র মিয়ানমার। এসব রোহিঙ্গা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মিয়ানমারে বসবাস করলেও মিয়ানমার বলছে তারা বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী। এসব রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় ১৯৮২ সালের একটি আইনের মাধ্যমে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রথম দিককার ঘটনায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের বাইরে স্থাপিত ক্যাম্পে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সর্বশেষ হামলা চালানো হয় কফি আনান কমিশন রিপোর্ট দেয়ার পরের দিনই। ওই রিপোর্টে রাখাইনে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আহ্বানও জানানো হয়। জানানো হয় সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বার বার আলোচনা করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু এক্ষেত্রে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা আছে এমন সদস্যদের মধ্যে বিভক্ত দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। গত মাসের শেষের দিকে নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নিধন বন্ধ করার আহ্বান জানায় বৃটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান চীনের রাষ্ট্রদূত। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সতর্ক করেন। তিনি বলেন, (মিয়ানমারের ওপর) অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হলে তাতে সমস্যা শুধু খারাপই হবে। শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া দেলাত্রি। তিনি বলেছেন, দুটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে এক্ষেত্রে জনমত গড়ে তোলা সহায়ক ও উপযোগী হবে। তা হলোÑ এক. কফি আনান কমিশনের সুপারিশের প্রতি সমর্থন দেয়া। দুই. অগ্রহণযোগ্য অবচলাবস্থার নিন্দা জানানো। এই বৈঠকে বৃটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফটের সঙ্গে তিনি সহসভাপতি ছিলেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো অবরোধ অথবা নতুন কোনো রেজুলেশন নেয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাইক্রফট বলেন, সবাইকে একত্রিত করার মাধ্যমে কাজ করায় আশাবাদি তিনি। আরো কিছু করার প্রয়োজন আছে কিনা আমরা তা খতিয়ে দেখবো। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে নি চীন বা রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বা তাদের মিশন।