শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | জাতীয় | জেলার খবর | তথ্যপ্রযুক্তি | প্রবাস | মুক্তমত | শিরোনাম | সর্বশেষ » প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি ১১ বাংলাদেশি ।। লালমোহন বিডিনিউজ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি ১১ বাংলাদেশি ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মেক গ্রেট অ্যাগেইন’ বলে স্বপ্ন দেখানো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি হলেন ১১ বাংলাদেশি। কাগজপত্রহীন এই অভিবাসীদের জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বুধবার ভোরে ১১ জনকে আটক করে অ্যারিজোনার দুর্গম ডিপোর্টেশন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশগামী বিশেষ ফ্লাইটে জোর করে তুলে দেয়া হয়। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি।
বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন সেলিম আহমেদ, মোজাম্মেল হক, করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, বাবলু শরিফ, মোহাম্মদ বাদল রনি, মোহাম্মদ ফরিদুল মওলা, মনিরম্নল ইসলাম, নাসরিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আম্বিয়া ও খায়রম্নল আম্বিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দ্রম্নত পাসপোর্ট দিয়ে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে সহযোগিতা করেছে। এতে ভুক্তভোগী অভিবাসী ও তাদের পরিবার আইনের সাহায্য নেয়ার আগেই বিতাড়ন-প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের আটক করার পর মার্কিন অভিবাসন বিভাগ থেকে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশিস্নষ্ট দূতাবাস বা কনসু্যলেট তাদের দেশের নাগরিক কিনা, তদন্ত্ম করে সময় নিলে ওই সব ব্যক্তির পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ব্যাপক ধরপাকড়ে
হঅ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে দুই নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। যেকোনো সময় তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের তথ্যাদি চাওয়া মাত্র দ্রম্নত তা আইএসকে (ইমিগ্রেশন সার্ভিস) দিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে সতর্ক করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, অভিবাসীদের তথ্য জানাতে গড়িমসি করায় বাংলাদেশের নাগরিকদের বি-১ ভিসা বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ এ-সংক্রান্ত্ম হুশিয়ারিপত্র দূতাবাসে পাঠায়। এরপর থেকেই ভিসাপ্রক্রিয়া সচল রাখার স্বার্থে দূতাবাস দ্রম্নতগতিতে ট্রাভেলস ডকুমেন্ট ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য হস্ত্মান্ত্মরের প্রক্রিয়া শুরম্ন করে।
দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুরম্ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের তথ্য দিতে দেরি হওয়ায় ঢাকা থেকে বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের ভিসা আবেদন বাতিল হয়। ওই পক্রিয়া বন্ধ করতেই দূতাবাসকে দ্রম্নত তথ্য দিতে হয়।
মানবাধিকার সংগঠক, সাউথ এশিয়ান এডুকেশন স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং অর্গানাইজেশনের নির্বাহী মাজেদা উদ্দিন বলেন, ট্রাম্প পশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে দুই নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে আছেন। তারা এখন অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে আছেন। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, নিউজার্সি ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে তাদের আনডকুমেন্টেড হিসেবে আটক করে ইমিগ্রেশন সার্ভিস। আটক ব্যক্তিদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আটক হওয়া ব্যক্তির পরিবারের বরাত দিয়ে মাজেদা উদ্দিন বলেন, আটক ব্যক্তিদের হাতে ইংরেজিতে ‘লো আর হাই’ লেখা বিভিন্ন রঙের ব্যান্ড লাগানো আছে। গত চার মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস ১৪ জনকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে। কোনো তদন্ত্ম ছাড়াই দূতাবাস ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিচ্ছে এবং দূতাবাস আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত করে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাদের মুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট না দিলে তারা আপাতত রক্ষা পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে পারতেন। পাকিস্ত্মান দূতাবাস দেশটির আটক ব্যক্তিদের ট্রাভেলস ডকুমেন্ট না দেয়ায় তারা বন্ড দিয়ে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকতে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মাজেদা উদ্দিন বলেন, দেড় মাস আগে চারজন ও গত তিন-চার মাসে মোট ১৪ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বিতাড়িত হওয়া বাংলাদেশিরা অনেকেই দুই-তিন দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। এখানে বিয়ে করেছেন, সন্ত্মান হয়েছে। বিতাড়নের শিকার বাবলু শরিফের পরিবার গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানিয়েছে, এভাবে যেন বিতাড়ন না করা হয়।
এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরম্নদ্ধে নতুন ৭০ দফা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষ্য, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা চূড়ান্ত্মভাবে সমাধান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোয়াইট হাউস গত ৯ সেপ্টেম্বর ৭০ দফা পরিকল্পনা কংগ্রেসে উপস্থাপন করে। এ পরিকল্পনায় সীমান্ত্মদেয়াল নির্মাণের কথাও অন্ত্মর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান আইনে তিনটি পরিবর্তন রয়েছে। সীমান্ত্ম নিরাপত্তা, অভ্যন্ত্মরীণ আইনের শক্ত প্রয়োগ এবং বৈধ অভিবাসন-ব্যবস্থার সংস্কার।
অবৈধ অভিবাসন বন্ধে বিচার বিভাগ, পররাষ্ট্র, লেবার ডিপার্টমেন্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিসহ প্রধান তিন অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে অবৈধ অভিবাসী-অধু্যষিত নগরে দেয়া আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা বন্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার শিথিল নীতি কঠোর করার কথা বলা হয়েছে। মা-বাবাহীন বহিরাগত শিশুদের প্রমাণ করতে হবে, তারা মা-বাবাহীন এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মানবিক সুরক্ষা চাইছে। ভ্রমণকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে তাদের কঠোর শাস্ত্মির মুখে পড়তে হবে। ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার ক্ষমতা থাকবে।