বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় | শিরোনাম | সর্বশেষ » এবার সরকারি পাসপোর্ট দিয়ে তুরস্কে মানবপাচার
এবার সরকারি পাসপোর্ট দিয়ে তুরস্কে মানবপাচার
সোহেল ঢাকা : অবৈধভাবে সাগরপথের মানব পাচার নিয়ে যখন দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঠিক তখনই বাংলাদেশে মানব পাচারের আরেক ভয়ঙ্কর পথের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এপথে মানব পাচার বৈধ করতে চরম জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারন মানুষকে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে তাদেরকে সরকারি বা ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’ দিচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের কিছু সংখ্যক উর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তা।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট বানাতে সরকারের অনুমোদন লাগে। বিদেশে যেতে প্রয়োজন হয় সরকারি আদেশ বা জিও। এরপর আছে বিমানবন্দরে অভিবাসন পুলিশের যাচাই। সবকিছু সম্পন্ন করেই সরকারি কর্মকর্তা সেজে চলে যাচ্ছেন অনেকে। আর এ কাজে সহায়তা দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারাই।
মানব পাচারের এপথে তারা প্রথমেই বেছে নিয়েছে তুরস্ককে।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সরকারি কর্মকর্তারা ২০১২ সাল থেকে তুরস্কে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। সেখান থেকে তাৎক্ষণিক ভিসা নিয়ে যাওয়া যায় ইউরোপের অন্যান্য দেশে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া তুরস্ক সরকারের এক চিঠির পরই এনিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে তুরস্ক বাংলাদেশের সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহারকারী এ রকম তিনজনের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। এঁরা হচ্ছেন তফিকুল ইসলাম (৫১২৫৮৪৫), মামুনুর রশিদ (৬১২৬০৪২) ও আমিন উদ্দিন (১১২৬৬৩৯)।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, তুরস্কের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে এমন আরও ব্যক্তির নাম পাঠাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তুরস্কের পাঠানো এ অভিযোগের পর বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছে। কোন কোন কর্মকর্তা এসব পাসপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন, কারা সিল মেরেছেন, কার নির্দেশে তা তৈরি হয়েছে এসব যাচাই-বাছাই করা হয়। তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে চিহ্নিত করে অধিদপ্তর।
তাঁরা হলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মুন্সী মুয়ীদ ইকরাম, সহকারী পরিচালক এস এম শাহজাহান, উচ্চমান সহকারী মো. শাহজাহান মিয়া এবং মো. সাইফুল ইসলাম।
এই চারজনকেই মিথ্যা তথ্য ও জাল অনাপত্তি সনদ দেখিয়ে সরকারি কর্মকর্তা নন এমন নাগরিকদের ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’ দেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্তের আদেশ দেওয়া চিঠিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর বলেছে, প্রাপ্যতাবিহীন ব্যক্তিদের ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’ দেওয়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। যাঁরা সরকারি কর্মকর্তা সেজে ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’ নিয়ে তুরস্কে গিয়েছেন, তাঁদের পাসপোর্ট আবেদনপত্র যাচাই করে দেখা গেছে যে আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই পাসপোর্টের আবেদনপত্র গ্রহণ ও ইস্যু প্রক্রিয়ায় জড়িত থেকে কর্মকর্তারা কর্তব্যে অবহেলা ও গুরুতর অসদাচরণ করেছেন।