বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় | রাজধানী | শিরোনাম | সর্বশেষ » প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কার্যভার ওয়াহহাব মিঞা’র হাতে ।। লালমোহন বিডিনিউজ
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কার্যভার ওয়াহহাব মিঞা’র হাতে ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চের বিচারিক কার্যক্রম শুরম্নর পর তা ১০টা পর্যন্ত চলে।
বেঞ্চের অপর বিচারকরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত ২৪ আগস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। অবকাশের মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের শেষ দিন ছিল সোমবার, সেদিনই প্রধান বিচারপতির আরও এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার খবর দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আগামী ৩ অক্টোবর হতে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন।”
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি ওই কার্যভার পালন করবেন।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কয়েক মাস আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি।
অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খুললে বিচারপতি সিনহার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের। তার আগেই প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের এই সংশোধন এনেছিল বর্তমান সরকার। হাইকোর্ট ওই সংশোধন বাতিলের পর আপিল বিভাগও একই রায় দেয়।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সংসদ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেছেন বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সংসদ সদস্যরা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।
ওই প্রস্তাব পাসের আগে সংসদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এই রায় দিয়েছে।
‘সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’ এই রায় দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকার প্রধান।
রায় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা আদালতে শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সে সেদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় দেয়ার পরের পরিস্থিতির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছে।
পাকিস্ত্মানের সঙ্গে তুলনা করায় নতুন করে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে পরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, তাকে ‘মিসকোট’ করে প্রকাশিত বক্তব্যের কারণে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রম্নল হক ষোড়শ সংশোধন বাতিলের ওই রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ বলেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এতে তারা ‘কামিয়াব’ হবেন বলে আশা করছেন।
বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি
অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান
এদিকে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সভায় নেতৃত্ব দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।
বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সময়মতো এজলাসে বসবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ করবেন না। এ সময় দ্রুত রায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।’
মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টার দিকে শুরু হয়ে পৌনে ৩টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত আদালত ও বিচার বিভাগীয় প্রশাসন কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় ফুলকোর্ট সভায়।