সোমবার, ২ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | জাতীয় | রাজধানী | শিরোনাম | সর্বশেষ » রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার - পররাষ্ট্রমন্ত্রী ।। লালমোহন বিডিনিউজ
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার - পররাষ্ট্রমন্ত্রী ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : সেনাবাহিনীর নির্যাতন-হত্যা আর ধর্ষণের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
মন্ত্রী জানান, এ জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে শিগগির এ কমিটি ঘোষণা করা হবে। তার আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করবেন।
সোমবার দুপুরে সফররত মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরবিষয়কমন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এ এইচ মাহমুদ আলী। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া নির্যাতনের জের ধরে পাঁচ লাখ এক হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনে নিন্দা জানায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। গত বৃহস্পতিবার এ সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ।
গুতেরেজ মিয়ানমারকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান। এ ছাড়া অবিলম্বে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বভূমিতে ফেরত নেওয়া এবং আক্রান্ত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীদের পরিদর্শনের সুযোগ দিতে বলেন।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দেয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। এসব কারণের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার বেশ চাপে আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর কোনো কৌশলের অংশ কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই গতকাল রাতে ঢাকায় আসেন অং সান সু চির দপ্তরবিষয়কমন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে। পরে দুপুরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে মিয়ানমার।
‘তখনই যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের বিষয়টি আসে এবং মিয়ানমার তাতে একমত হয়’ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, এই কমিটিতে দুই পক্ষই নাম দেবে।
যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন কবে নাগাদ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবে আমরা এই বিষয়ে একমত হয়েছি। একটি সভায় তো সবকিছু শেষ হয়ে যাবে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তাঁরাই জানাবে কখন, কীভাবে, কী পন্থায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
২০০৫ সালের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের কেউই ফেরত যায়নি। এখন তাদেরকে ফিরিয়ে নেবে- এ ব্যাপারে কতটা আশাবাদী। এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
এ এইচ মাহমুদ আলী আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির একটি খসড়া আজ মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসের ব্যাপারে আমরা সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিগগির মিয়ানমার সফরে যাবেন।’