শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | বিভাগের খবর | শিরোনাম | সর্বশেষ » শরণার্থী রোহিঙ্গা পরিবারগুলো পাচ্ছে বিশেষ ত্রাণ কার্ড ।। লালমোহন বিডিনিউজ
শরণার্থী রোহিঙ্গা পরিবারগুলো পাচ্ছে বিশেষ ত্রাণ কার্ড ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : ত্রাণ বিতরণে আরো শৃঙ্খলা আনতে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালিকা তৈরির পর প্রত্যেক নতুন আসা রোহিঙ্গা পরিবারকে নিবন্ধিত ক্যাম্পের পরিবারগুলোর মতো বিশেষ কার্ড দেয়া হবে। তখন ত্রাণ না পাওয়ার যেসব অভিযোগ আসছে, সেটা বন্ধ হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশাসনের মুখপাত্র খালেদ মাহমুদ বলেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গা সদস্য যারা এসেছেন তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ চলছে। পাশাপাশি আমরা পরিবারের তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছি। সেনাবাহিনী আমাদের তালিকা তৈরির কাজে সহযোগিতা করছেন। রোহিঙ্গাদের আমরা সুশৃঙ্খলভাবে একটা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে চাইছি। মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে এসেছে তার সঠিক হিসাবের জন্যও এই তালিকা জরুরি বলে মনে করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, থাইংখালী, হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা, বাঘঘোনা, জামতলী, বালুখালী, টেকনাফের উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে গ্রামের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এক সপ্তাহ আগেও ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছিল। কোনো গাড়ি দেখলেই ছুটে আসতো শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। দুই হাত পেতে আর্তি জানাতো ত্রাণের জন্য। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান নিয়ে অনেকেই এসেছিল অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে। সড়কে চলতে চলতে ছুড়ে দিতো বিস্কুটের প্যাকেট কিংবা পুরনো কাপড়। সেটা কুড়াতে গিয়ে হুড়োহুড়ি-মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। লাখো রোহিঙ্গার ঢল এবং ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা সামলাতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল প্রশাসন, তখন জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী। চলতি সপ্তাহে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ত্রাণ বিতরণের নামে সড়কে খাবার ছুড়ে দেয়ার মতো কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। আবার নিয়ম না মেনে বড় বড় ত্রাণবাহী গাড়ি নিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতিতে ঢুকে পড়ার মতো কোনো দৃশ্যও চোখে পড়েনি। বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন, সরকারিভাবে দেয়া ত্রাণ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খলভাবে বিতরণ হতে দেখা যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিবন্ধিত ক্যাম্প থেকে পুরনো রোহিঙ্গারা বেরিয়ে নতুন সেজে ত্রাণ হাতিয়ে নেয়ার অনেক অভিযোগ তারা পেয়েছেন। আবার নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একই পরিবারের কয়েকজন ত্রাণ পেলেও অনেক পরিবারের কেউই পায়নি, এমন তথ্যও আছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি টিম করেও তেমন সুফল আসেনি। মিয়ানমারের মংডু জেলার বুচিদং থেকে সাতদিন আগে আসা রইছউল্লাহ বলেন, দেরি করে এসেছি। সেজন্য বালুখালী পাহাড়ের সামনে জায়গা পাইনি। শেষদিকে যেখানে ঘর করেছি সেখানে দুইটা পাহাড় পার হয়ে যেতে হচ্ছে। সেখানে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছে না। বলিবাজার এলাকা থেকে আসা মোহছেনার (১২) ঘরও বালুখালী পাহাড়ের শেষ প্রান্তে। মোহছেনা জানায়, সাতদিন আগে এসে চিঁড়া-মুড়ি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। তবে ত্রাণ না পাওয়ার এসব অভিযোগ যেন আর না আসে সেজন্য রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনউদ্দিন। তিনি বলেন, সব রোহিঙ্গাকে আমরা উখিয়ার বালুখালীতে নির্ধারিত দুই হাজার একর জায়গার মধ্যে নিয়ে যাবো। সেখানে সেনাবাহিনী শেড তৈরির কাজ করছে। পরিবারের তালিকাও হচ্ছে। খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিবারের তালিকা আমরা করছি। ইতিমধ্যে পরিবারকে দেয়ার জন্য কার্ডও ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। পরিবারগুলো কার্ড নিয়ে জমা দেবেন জেলা প্রশাসনের ক্যাম্পে। সেখানে নির্দিষ্ট সময় পরপর তাদের ত্রাণ দেয়া হবে। তখন আর কোনো অভিযোগ থাকবে বলে আমরা মনে করি না। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় উখিয়া ও টেকনাফে ১২টি ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে ত্রাণ সংগ্রহের পাশাপাশি বিতরণের কাজও চলছে।