বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | তজুমদ্দিন | বিবিধ | ভোলা | মুক্তমত | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » শেখ হাসিনার নামেই আজ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচয় ।। নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন
শেখ হাসিনার নামেই আজ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচয় ।। নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন
শুভ জন্মদিন প্রিয় নেত্রী :
শেখ হাসিনার নামেই আজ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচয়
নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন
সংসদ সদস্য, ভোলা-৩
২৮ সেপ্টেম্বর। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন। বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের হাচুমণি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরবর্তী অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার রাজনৈতিক ব্যাস্ততার কারণে তাঁকে খুব একটা কাছে পাননি। বঙ্গবন্ধু তখন দেশ বিভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত। থাকতেন কলকাতায়। দাদা ও দাদীর আদরে শৈশব শুরু হয় তাঁর। বাংলাদেশের গ্রামে আর দশজন শিশুর শৈশব যেমন কাটে তেমনই গ্রামবাংলার ধুলোমাটি মেখে আর দশজন সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে পরিবারের সাথে শেখ হাসিনার শুরু হয় নগর জীবন। শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতি করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান নেতার মেয়ে হয়েও তিনি আর দশজন কর্মীর মতই ছাত্র রাজনীতি করেছেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভিশপ্ত রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার কিছুদিন আগে ছোট বোন রেহানাসহ ইউরোপ ভ্রমণে যান। তাই বেঁচে যান দু’বোন। কিন্তু হারান সমস্ত পরিবার। এক রাতেই দু’বোন এতিম হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অন্ধকাচ্ছান্ন। সংশয় প্রতিহিংসা-দমনপীড়ন-শোষণ নির্যাতনে মানুষ ছিল অসহায়। কান্ডারীহীন নৌকা যেন দিশেহারা ছিল। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরই ১৭ মে তিনি দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৭ই মে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ঢাকার রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়। জাতির পিতার কন্যা আসবে বলে ঢাকার রাস্তায় জনজোয়ার সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে দেশি বিদেশী অপশক্তির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। লড়তে হয়েছে জাতির পিতার খুনিদের বিরুদ্ধে। তাঁকে লড়তে হয়েছে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এক দীর্ঘ-স্বৈরাচার-সামরিক-সরকার-বিরোধী আন্দোলন করেছেন শেখ হাসিনা। নিজের দল সংগঠিত করেছেন। বঙ্গববন্ধু নিহত হওয়ার পর দলটি ভেঙ্গেচুরে বিক্ষিপ্ত ছিলো। নেতা কর্মীরা ছিলো আশাহীন। তাদের মনে আশার আলো জ্বলেছেন। নেতা ও কর্মীদের মধ্যে আদর্শ স্থাপন করেছেন। পিতার মতই অসীম সাহসী, দৃঢ়তায় অবিচল, দেশপ্রেম ও মানবিক গুনাবলীসম্পন্ন একজন আদর্শবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মানুষের কাছে আজ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নেতা। দীর্ঘ ২৩ বছর উল্টোরথে চলা বাংলাদেশকে আবারও স্বাধীনতার চেতনায়, বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারায় ফিরিয়ে আনেন। অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর ও ক্ষয়িষ্ণু বাংলাদেশকে আবারও সমৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশ এক প্রলয়ঙ্করী বন্যার কবলে পড়ে, হাসিনা সরকার সাফল্যের সঙ্গে সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করে এবং নিত্যব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম পুরো শাসনামলে স্থিতিশীল রাখে। এটা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনা দক্ষ নেতৃত্বে সারাদেশের বন্যাকবলিত এলাকা ভ্রমণ করে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ প্রায় দুই দশক বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সুপরিকল্পিত উপায়ে, শেখ হাসিনার প্রথম সরকার আমলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দুই দশকজুড়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় এসেছেন এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। এদেশের দুঃখী মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি উদীয়মনা অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সারা বিশ্বে শেখ হাসিনার নামেই আজ বাংলাদেশের পরিচয় হয়। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শেখ হাসিনার গুরুত্ব এখন অপরিসীম। জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ গ্রহণ করে বিশ্বের দেশে দেশে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের যে ক’জন নেতাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব দেয় শেখ হাসিনা তাদের মধ্যে অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে মানবজাতির উন্নয়ন ও কল্যাণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক চিন্তা, গবেষণা, উদ্ভাবন, সৃষ্টি এবং দৃষ্টি আকর্ষণমূলক কাজের জন্য সারাবিশ্ব থেকে যে একশ’ শীর্ষ ব্যক্তির তালিকা করা হয় সেখানে শেখ হাসিনার অবস্থান ১৩তম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২ জনের তালিকা করা হয়েছিল ২০১১ সালে। ওই তালিকায় তার অবস্থান হলো সপ্তম। আবার ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা ১০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ৫৯তম। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। ২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন বিশ্বের ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। আমরা যদি শেখ হাসিনার সাফল্যের দিকে দেখি তাহলে দেখব তিনি যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ৩০টি পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন।
আজ শেখ হাসিনার ৭১ তম জন্মদিন। ঠিক এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে যে কয়জন জীবিত নেতার নাম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। কেননা আজ বিশ্ববাসী দেখছে শেখ হাসিনার চেয়ে উদারবাদী, শেখ হাসিনার চেয়ে মানবতাবাদী কোনো নেতা এই মুহূর্তে পৃথিবীতে নেই। রাষ্ট্রহীন, নেতাহীন, আশ্রয়হীন, সর্বস্বান্ত রোহিঙ্গাদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত—শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” বঙ্গবন্ধুর মেয়ে দেশরতœ শেখ হাসিনা পিতার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আজ শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে রোল মডেলে পরিণত করেছেন। কিভাবে এত দ্রুত সকল মানুষের জন্য সুষম উন্নয়ন করতে হয় সে ম্যাজিক শিখতে শেখ হাসিনার কাছে আসেন সারা বিশ্বের উন্নয়নকামী নেতারা। এটাই বাংলাদেশের সফলতা। আর সে সফলতা এসেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কবল থেকে বারবার রক্ষা করে যাচ্ছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বিনিময়ে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি করেন নি। এটা আজ সকলেই জানি। বরং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায্য পাওনা আদায় করেছেন। সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে এখন সমীহের চোখে দেখা হয় কেননা দেশটির নেতা হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি পরিচিত নাম। দেশটি আজ নেতৃত্বের আসনে। আর তার সবই এসেছে জাতির পিতার মেয়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে। শেখ হাসিনা আছেন বলেই আজ বাংলাদেশ নিরাপদ। শুভ জন্মদিন প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।