মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | জাতীয় | জেলার খবর | শিরোনাম | সর্বশেষ » রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কলেরার ঝুঁকি! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিয়ারি ।। লালমোহন বিডিনিউজ
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কলেরার ঝুঁকি! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিয়ারি ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ: বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে,কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ‘পানিবাহিত রোগের বিস্তারের তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে সবাই উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক এবং চ্যালেঞ্জিং।
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা থেকে পালিয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে এই শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে।
(WHO) বলছে, এক মাস আগে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ৬৮টি শিবির ও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সুবিধা নেই।
দ্রুতই বিশ্বের বড় শরণার্থী শিবিরগুলোর অন্যতম পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া শিবিরগুলোতে খাবার ও ওষুধের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে (WHO) বলছে, ‘পানিবাহিত রোগের বিস্তারের তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে সবাই উদ্বিগ্ন। সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক এবং চ্যালেঞ্জিং।’
(WHO) বলছে, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল সেন্টার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক মাসের মধ্যে অন্তত সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গাকে ডায়রিয়া চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে হাম ও পোলিওর টিকা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-প্রধান এনায়েত হোসাইন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে আমরা উদ্বিগ্ন।’
এদিকে কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, লাখ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা গেলেও এখনো শৌচাগারের (ল্যাট্রিন) ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতি ৮৬০ জনের বিপরীতে মাত্র একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত এক মাস ধরে যত্রতত্র পায়খানা-প্রস্রাবের ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে উখিয়ার কয়েকটি গ্রামের স্থানীয়রাও।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সরকারি এবং বিভিন্ন এনজিও ১২০০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিন তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে ৫০০টির মতো। আনুপাতিক হারে ৮৬০ জনের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার যা কখনই পর্যাপ্ত নয়।
রোব ও সোমবার সরেজমিন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও ট্যাংখালীতে গিয়ে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে ধানক্ষেতসহ আশপাশের খোলা স্থানগুলোতে মলমূত্র ত্যাগ করছে রোহিঙ্গা শিশুরা। পুরুষরাও বাদ যাচ্ছে না। যে মাঠে খেলাধুলা করছে সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ করছে শিশুরা। বয়স ৪-৫ বছরের বেশি নয়। এ বিষয়ে মায়েরাও তেমন সচেতন নন।
অস্থায়ী যেসব শৌচাগার বসানো হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সেগুলো দ্বিতীয়বার ব্যবহারেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে অনেকে। অস্থায়ী এসব শৌচাগারের সামনে মেয়েদের লাইন দেখা গেলেও পুরুষদের তেমন লক্ষ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালুখালী ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া মিয়ানমারের মংডু থেকে আসা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পের বাইরে পর্দা টাঙিয়ে পাঁচটি প্যান বসানো হয়েছে। কিন্তু সারাদিন সেখানে ভিড় লেগে থাকে। বাচ্চা নিয়ে এত সময় বসে থাকা যায় না। বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে ক্যাম্পের বাইরে খোলা স্থানে পায়খানা করাই।’
কুতুপালং ক্যাম্পেরর বস্নক-৫ এ আশ্রয় নেয়া আফসানা বলেন, ‘শৌচাগার তৈরির জন্য ক্যাম্পের সামনে অনেক প্যান আর বাঁশ রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো তৈরি হয়নি। বাধ্য হয়ে আমাদের রাতের অাঁধারে পাহাড়ের ঢাল কিংবা মাঠে যেতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আলী হোসেন বলেন, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি উভয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের স্যানিটেশন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ৫০০ ল্যাট্রিন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
২৫০ মিলিয়ন ডলার চায় সরকার
অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিশ্বব্যাংকের কাছে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়েছে সরকার।
রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা ও দুর্যোগকালীন চিকিৎসা সহায়তা বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার বৈঠকের পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এজন্য অনেক টাকা-পয়সা প্রয়োজন। আমরা বিশ্বব্যাংককে ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছি। রোহিঙ্গাদের ম্যানেজ করার জন্য ফান্ডিং করার জন্য। আমরা ইতোমধ্যে আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের জন্য চিঠি দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য এটা অর্থ আমরা চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দেখবে বিবেচনা করবে ওনারা কতটুকু দিতে পারেন। ওনারা আশ্বস্ত করেছেন, একটা ভালো ফিগারের অ্যামাউন্টই দেবেন। তবে কত ফান্ডিং করবেন সেটা এখনো আমরা জানি না।’