মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | শিরোনাম | সর্বশেষ » মিয়ানমারে জ্বলছে রোহিঙ্গাদের ঘর, চলছে গণহত্যা ধর্ষণ ।। লালমোহন বিডিনিউজ
মিয়ানমারে জ্বলছে রোহিঙ্গাদের ঘর, চলছে গণহত্যা ধর্ষণ ।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, চলছে গণহত্যা ও ধর্ষণ। হেলিক্প্টার থেকে শত শত রাউন্ড মর্টার ও গুলি বর্ষণও করা হচ্ছে। নিহতদের শোকে বাকরুদ্ধ আত্মীয়স্বজন। চারদিকে কান্নার শব্দ। স্বজনের লাশ পেছনে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে মানুষ। আবার পালাতে চেষ্টা করা হলে পিছন থেকে করা হচ্ছে গুলি। যারা গোলাগুলির শিকার হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরো হিংস্ত্র হয়ে উঠেছে। খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দিনে রাতে হ্যালিকপ্টার থেকে মর্টার, বোমা হামলা ও মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ শব্দে মুর্ছা যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু। যেন যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে রোহিঙ্গা অধ্যূষিত আরকানে। উগ্রপন্থি দমনের অজুহাতে বোমা ও মর্টার হামলা করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। ‘জঙ্গিগোষ্ঠীর’ সদস্য দাবি করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরাকানের মুসলিম অধ্যূষিত এলাকার তরুণদের। আর বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টে বাড়ছে রোহিঙ্গা আশ্রায় প্রার্থীর সংখ্যা।
রোহিঙ্গারা বলছেন, যুদ্ধ নয় গণহত্যার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে সে দেশের সরকারি বাহিনী। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ও রাখাইন সম্প্রদায়। এইসব বাহিনী এবারে একচেটিয়াভাবে রোহিঙ্গাদেরকে গণহত্যা করে রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধদের পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করছে উদ্যোগ নিয়েছে। হাজার বছরের রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাসকে ধুলোয় মুছে দিতে গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী কাজ করছে জাতিসংঘের আহ্বানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে।
ফলে মিয়ানমারের সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর হাত থেকে নির্মম নির্যাতন থেকে বাদ পড়ছে না মায়ের কোলের শিশু। মায়ের কোল থেকে শিশু ছুড়ে ফেলা হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনে। পদদলিত করে দুই দিনের শিশু খুন করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না তারা। নারী ধর্ষণ করছে গণহারে। এইসব রোহিঙ্গার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দিন দিন ফুরিয়ে আসছে। নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ, লুন্ঠনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে সহায় সম্পত্তি ফেলে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজছে সহায়হীন অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদীর পাড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশু জড়ো হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। আকাশের নিচে মাটির বিছানায় অন্ন-বস্ত্রহীন নিরূপায় হয়ে চেয়ে আছে একটু সহায়তা পাওয়ার আশায়।
কোনো মা সন্তান হারিয়ে, কোনো সন্তান মা হারিয়ে আর্তনাদ করছে। মায়ের বুকে দুধ না পেয়ে কুলের শিশু ক্ষণেক্ষণে কেঁদে মাকে বলার চেষ্টা করছে। মায়েরা অসহায় হয়ে পড়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছে এইস নারীদের মাতৃত্ব। বয়োবৃদ্ধরা চোখে মুখে চরম হতাশার চিত্র। তাদের ছেলে, মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের চিন্তায় গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।
রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়ার উত্তরপাড়ার আহমদ হোসেন মুঠোফোনে জানান, রোববার খুব ভোরে সেনাবাহিনীর একটি দল গ্রামে ঢুকে স্থানীয় জহির, করিম ও আব্দুর শুক্কুরকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা পালিয়ে পাশের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পরে ওই তিন তরুণের ওপর বর্ববর নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়।
ঢেঁকিবনিয়া পূর্বপাড়ার আবছার কামাল জানান, সেনাবাহিনী সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে। যেসব বাড়িতে মানুষ পাচ্ছে না সেসব বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আর যাকে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে রাথদং জেলার সোহাগপ্রাং রোহিঙ্গা পল্লীতে নারকীয় হত্যালীলা চালিয়েছে মিয়ানমারের বর্বর বাহিনী । পুলিশ, লুন্টিং, সেনা ও বিজিপি সম্মিলিতভাবে এ বর্বরতা চালিয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতের শেষভাগে এ নৃশংসতা চালিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কয়েক শ’ সৈন্য গ্রামটি ঘেরাও করে চিরুণী অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা পুরুষদের আটক করে। আটককৃত পুরুষদের দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে গণহত্যা চালায়। রোহিঙ্গা নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে গ্রামের একটি স্কুলঘরে গণধর্ষণ করেছে। উঠতি বয়সের কন্যা শিশুও রক্ষা পায়নি সেনাদের ধর্ষণ থেকে। অনেকেই ধর্ষণে বাধা দেয়ায় তাদেরকে হত্যা করা হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, হত্যার পর গাড়িতে তুলে অনেক লাশ নিয়ে গেছে । তবে বেশ কিছু লাশ এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে । এই সময় এই সব রোহিঙ্গা পল্লীতে অগ্নিসংযোগ করে। পুড়ে মরেছে গবাদিপশুও। গ্রামটি এখন জনশূন্যে ও নিস্তব্ধ । এরপর আশেপাশের সব রোহিঙ্গা পল্লী ঘিরে রেখেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ইতিমধ্যে আরাকানের প্রত্যেক মুসলিম পল্লীতে নিধনযজ্ঞ চালানোর জন্য ইতিমধ্যে অমুসলিমদের সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। এভাবে বর্ববরতা চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো আরাকান রোহিঙ্গাশূন্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে টেকনাফের নাফনদীর পানিসীমানা অতিক্রম করার সময় ৪৭৫ রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। রাতে নাফনদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত পাঠানো এসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
টেকনাফস্থ বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রাতে পৃথক অভিযানে ৪৭৫ জন রোহিঙ্গাকে পানিসীমানা অতিক্রম করার সময় প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গত ৫ দিনে ১০১৬ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।