রবিবার, ৬ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » তথ্যপ্রযুক্তি | বিনোদন | শিরোনাম | সর্বশেষ » পর্নো-মাদকের কারনে বাড়ছে ধর্ষণ ও বর্বরতা
পর্নো-মাদকের কারনে বাড়ছে ধর্ষণ ও বর্বরতা
লালমোহন বিডিনিউজ: প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীর বাড্ডায় চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর বগুড়ায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়েসহ ২ জনকে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনটি সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দেশে ইন্টারনেট কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ৮০ শতাংশ এবং মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের ৮৫ শতাংশ ব্যক্তি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে।
আর এই পর্নোগ্রাফি আসক্তির কারণেই নারী ও শিশু ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল দাবি করছেন। আর এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই স্কুলপড়ুয়া তরুণ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। প্রযুক্তির মাধ্যমে ইউটিউব, ভাইবার, মর্জিলা, ফেসবুকসহ অসংখ্য সাইডে পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি। এর মধ্যে মেমোরি কার্ড, পেনড্রাইভে করে পাড়া-মহল্লায় ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম জানান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রকট আকার ধারণ করছে। পারিবারিক শিক্ষা, ফাউন্ডেশন শিক্ষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবহার না থাকার কারণে দেশের তরুণসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এছাড়া, তথ্য প্রযুক্তির বল্গাহীনভাবে নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় এসব অপরাধে উৎসাহ বাড়ছে। পূর্বের বাল্যশিক্ষা, নৈতিক ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর দিকে জোর দিয়ে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে সরকার এর সুফল পাবে বলে জানান তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং বর্বর নির্যাতন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির বল্গাহীন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অনেকেই মনে করছেন, ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার বা বর্বরতা পূর্বেও ঘটেছে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সংখা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ উন্নত হচ্ছে বা মানুষ শিক্ষিত হলেও এ বর্বরতাকে যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। দেশে যখন প্রযুক্তি ছিল না তখনও কিছু গ্রাম বা পাড়া-মহল্লায় কিংবা কতিপয় সিনেমা হলে ইংরেজি সিনেমার নাম করে নীল ছবি চালানো হতো। এছাড়া সর্বোচ্চ যাত্রা আয়োজনের নামে কিছু অশ্লীল নৃত্যই ছিল অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে প্রযুক্তি মানুষকে সব কিছুই হাতের নাগালে এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, তাদের এক গবেষণায় বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮০ শতাং এবং মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের ৮৫ শতাংশ মানুষই পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আর ২০১৬ সালে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামক সংগঠন পর্নোগ্রাফি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে স্কুলপড়ুয়া তরুণদের ৭৫ শতাংশই পর্নোগ্রাফি দেখেন। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউটিউব, ভাইবার, মর্জিলা, ফেসবুকসহ অসংখ্য সাইডে পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি, মেমোরি কার্ড, পেনড্রাইভে করে পাড়া-মহল্লায় গান ও ছবি লোড করার ব্যবসায়ীরা ২০ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে পর্নোছবি সরবরাহ করছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, পোস্তগোলা, কেরানিগঞ্জ, মিরপুর, মহাখালী, ফার্মগেট, গাবতলী, আমিনবাজার ও সাভার এলাকায় দশটি করে গান ও ছবি লোডের দোকানের ব্যবসায়ীরা জানান, স্কুল ও কলেজপড়ুয়া ছাত্র, শ্রমিক এমনকি অনেক বৃদ্ধ-বনিতাও তাদের মেমোরি কার্ড বা পেনড্রাইভে পর্নোগ্রাফি লোড করে নেন। তবে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের গ্রাহক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের এ ধরনের গ্রাহকের সংখা কমে গেছে। আর প্রত্যেক গ্রাহকই নিজে নিজে তার ডিভাইস দ্বারা ডাউন লোড করে ব্যবহার করতে পারেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) সংস্থার কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার ফাতেমা ইয়াসমিন জানান, গত জুলাই মাসে সারাদেশে ৩৪ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
বিভিন্ন কারণে ২৬৭ জন ব্যক্তি নিহত এবং ৮০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জুলাই মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংসতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। এছাড়াও শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, নারী নির্যাতন ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো এ মাসে উল্লেখযোগ্য ছিল। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি এবং পরীক্ষায় খারাপ ফল ইত্যাদি আত্মহত্যার কারণ। আর আটজন নারী গণধর্ষণের শিকার হয় ও তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীর বাড্ডায় চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। বগুড়ায় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর তাকে ও তার মাকে মাথা ন্যাড়া করার বর্বর নির্যাতনের ঘটনাটি দেশে-বিদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সূত্র জানায়, দেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, অশ্লীল বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ আইন ১৯৬৩ থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ না থাকায় পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীলতায় সারাদেশ ভরে গেছে। এছাড়া, টেলিভিশনে ভারতীয় চ্যানেল ও স্থানীয় কেবল অপারেটরদের চ্যানেলগুলোতে হরহামেশায়ই যৌন বর্ধক ওষুধের উত্তেজনাকর বিজ্ঞাপন প্রচারিত হলেও এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে মরণ ব্যাধি ইয়াবা যা কিনা যৌনবর্ধক হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ইয়াবার ছোবল সারাদেশে এতটাই বিস্তারে দেশের যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সারাদেশে প্রতিদিনই লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করছে। আর অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু কোনও প্রকারেই এই মরণ নেশার ট্যাবলেট রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইয়াবা এবং পর্নোগ্রাফি বিস্তারের ফলে কিছু উচ্ছৃংখল লোক সমাজে নানা ধরনের অঘটন যেমন নারী ও শিশু ধর্ষণসহ এমন কোনও অন্যায় কাজ নেই যা তারা করছে না। এজন্য দ্রুত এসব অপকর্ম রোধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।