শনিবার, ১৬ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » রাজধানী | শিরোনাম | সর্বশেষ » পবিত্র রমজানের আগেই বেড়েই চলেছে নানা পণ্যের দাম
পবিত্র রমজানের আগেই বেড়েই চলেছে নানা পণ্যের দাম
রাশেল সিকদার ঢাকা : খোলা বাজারে বেড়েই চলেছে ছোলাসহ নানা পণ্যের দাম, অথচ রমজান আসতে এখনও ঢের বাকি। পবিত্রতম মাসের আগে এ ধরনের অপবিত্র চর্চা এ দেশে নতুন নয়। বরং উৎসব-উপলক্ষের আগে এ ধরনের উল্মফন দিনে দিনে বাজারের ঐতিহ্য এবং ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। তবে শঙ্কার কথা হলো, এবার যেভাবে বাড়ছে তাতে দামের চূড়া রমজানের আগেই সাধারণের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজানের আগমন ঘটবে আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। সেই হিসেবে বাকি আছে প্রায় এক মাস। অথচ এখন থেকে দুসপ্তাহ আগে থেকেই পণ্যের দামের উলম্ফন শুরু হয়েছে। রাজধানীর একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে শুধু ছোলার দামই বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহেও এ ছোলা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ আতাউল জানালেন, শুধু ছোলা নয়, ভাঙ্গা বুটের ডাল, খেসারিসহ প্রায় সব ধরনের ডালের দামই বাড়ছে।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভাঙ্গা বুটের ডাল ৬৮ টাকা, খেসারি ৪৫ টাকা, মসুর ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ধরন ভেদে ডাল জাতীয় পণ্যের দাম কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজ এবং চিনির দামেও পরিলক্ষিত হয়েছে একই ধারা। পাইকারি বাজারে বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তা প্রতিটি ১৮৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, অথচ চার থেকে পাঁচদিন আগেও এ ধরনের বস্তা প্রতিটি ১৬৮০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। লাভ এবং খরচ মেটাতে এই চিনি বর্তমানে খুচরা বিক্রেতারা কেজি প্রতি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহে আগে এই পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এমনকি গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ পাল্লা প্রতি (৫ কেজি) ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
ভারতীয় পেঁয়াজের দামের ঝাঁজও কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা বাজারে এই পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে রসুন, আদাসহ সব ধরনের মসলার দাম ঊর্ধ্বমুখী।
আতাউলের মতো আরও কয়েকজন খুচরা বিক্রেতার কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পাইকারদের ওপর দোষ চাপালেন, পাইকাররা উৎপাদক-আমদানিকারকের ওপর এবং তারা রমজানের ওপর। অথচ উৎপাদন এবং আমদানিতে রমজানের কোনো কারসাজি নেই, কোনোদিন ছিলও না। বরং বিক্রেতারাই প্রতিবছরই রমজান আসার আগেই পণ্যের দর নিয়ে কারসাজি শুরু করেন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপের আগেই দাম পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়িয়ে নেন তারা। আর একটু বেশি কৌশলী বিক্রেতারা প্রতিটি পণ্যের জন্য দুটি দর বরাদ্দ রাখেন; একটি কেউ জানতে চাইলে বলার জন্য এবং অন্যটি বিক্রির জন্য। সে অনুযায়ী, এ বছরও দাম বাড়ানো শুরু করে দিয়েছেন।
তবে সাধারণ ক্রেতাদের দর নিয়ে বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। বরং বিনা বাক্যে পণ্য কিনতে একধরনের বাধ্য হন তারা।
এ ব্যাপারে আশরাফুল আনোয়ার নামের এক ক্রেতার উক্তি প্রণীধানযোগ্য। তার ভাষায়, দাম এবার যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হয় এভারেস্টের উচ্চতাকেও হার মানাবে। প্রতি বছরই এমনটি হয়।
বেসরকারি এ চাকরিজীবী আরও বলেন, দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে? দর নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া শুধু নাভিশ্বাস পর্যন্তই।
সত্যিই এ দেশে ক্রেতারা বড় নিরুপায়। তাদের অবস্থান সব সময় ভুক্তভোগীর কাতারে।