মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » মনপুরা | শিরোনাম | সর্বশেষ » মনপুরায় ব্লক বরাদ্ধের ৩ মাসে ভেঙ্গে গেছে ২ শতাধিক বাড়িঘর, দ্রুত কাজ শুরুর আবেদন
মনপুরায় ব্লক বরাদ্ধের ৩ মাসে ভেঙ্গে গেছে ২ শতাধিক বাড়িঘর, দ্রুত কাজ শুরুর আবেদন
লালমোহন বিডিনিউজ ,সীমান্ত হেলাল, মনপুরা(ভোলা) : “বাবারে বাড়ির লগে নদী আইয়া পড়ছে। তারপরও জন্মভিটা ছাইড়া যাইতে হইবো মনে অইলেই বুকের ভিতরডা ফাইটা যায়। চোহের পানি ধইর্যা রাখতে পারিনা। হুনছি ব্লক হালাইবো হিয়াল্লাই বাড়ি সরাইতে দেরী করছি। এহনো ব্লকের কোন নাম নাই। সরকার যদি তারাতারি ব্লক হালাইতো তইলে আর আমাগো ঘর ভাইঙ্গা অন্য জাগায় যাওয়া লাগতো না।” এভাবেই অশ্রুশিক্ত চোখে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মনপুরার নদী ভাঙ্গন কবলিত আন্দির পাড়ের মালের পুতু বাড়ির সবচেয়ে বয়ষ্ক ব্যক্তি কুলছুম বিবি।
ভোলার মনপুরায় নদী ভাঙ্গন রোধে ডাম্পিং ব্লক বরাদ্ধের পর ভেঙ্গে গেছে ২ শতাধিক বাড়িঘর। একনেকে বাজেট পাসের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি কাজ। এখনো ভাঙ্গনের প্রহর গুনছে নদীকূলবর্তী শতশত ঘরবাড়ি ও একশ এক পরিবারের সরকারী কলোনী। মেঘনার করাল গ্রাসে যারা নি:স্ব তাদের অনেকেই বাড়িঘর সরাতে পারছেন না। ভাঙ্গনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সামর্থবানরা চলে গেছেন নতুন ঠিকানায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব নদী ভাঙ্গন রোধে ডাম্পিং ব্লকের কাজ শুরু করার আবেদন নদীকূলবর্তীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের আন্দির পাড় ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় এখনো শত শত বাড়িঘর রয়েছে। এদের মধ্যে সামর্থবানরা সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়ি। আর যাদের সামর্থ নাই তারা এখনো প্রহর গুনছেন নদী ভাঙ্গন রোধে বাজেটকৃত ব্লকের কাজ শুরু হওয়ার। আবার কেউ কেউ পুরনো বাড়ি ছেড়ে যেতে মায়া কান্না করছেন। এদের মধ্যে কোন বাড়ির বয়স হয়েছে শত বছরের বেশী। কোন বাড়ির বয়স ৯০ বছর। কোন বাড়ির বয়স অর্ধশত বছর।
পুরনো বাড়িগুলো মধ্যে রয়েছে প্রায় ১শত দশ বছরের পুরনো চাঁন মিয়া হাওলাদার বাড়ি। এই বাড়িতে ৩ টি ঘর রয়েছে। এই বাড়ির মূল মালিক মৃত চাঁন মিয়া হাওলাদার, মৃত সেকান্তর মিয়া ও মৃত নওয়াব আলী। এই বাড়ির মূল মালিকরা সকলে যদিও গত হয়েছে তবে জীবিত সকল বাসিন্দার জন্মই এই বাড়িতে। তাই জন্মভিটার মায়া ত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবতেই হুহু করে কেঁদে ওঠেন সকলে। নতুন বাড়িতে না যেয়েও কোন উপায় নেই। ব্লক বাজেটের সময় এই বাড়ি থেকে নদীর দুরত্ব ছিলো ১ কিলোমিটার। কিন্তু ৩ মাস অতিবাহিত না হতেই সেই দুরত্ব এখন মাত্র ১শ গজে এসে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৯০ বছরের পুরনো মালের পুতু বাড়ি। পুরনো নাম মালের পুতু বাড়ি হলেও বর্তমানে ইসলাম মাঝী বাড়ি নামেই সবাই চেনেন। এই বাড়ির মূল মালিকদের মধ্যে ৩ জনই গত হয়েছেন। এরা হলেন, মৃত মো: ইসলাম মাঝী, মৃত নজীর আহমেদ, মৃত খুরশীদ আলম। জীবিত দুজন হলেন, দুদু মিয়া ও ফসি আলম। এই বাড়িতে মোট ৭ টি ঘর ছিলো। এর মধ্যে ৩টি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়ি থেকে নদীর দুরত্ব মাত্র ২০ গজ হলেও ব্লক ফালানোর আশায় আর পুরনো বাড়ির মায়ায় এখনো ৪ টি ঘর রয়ে গেছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে ২ টি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সেই গরের বাসিন্দারা বাড়ির মায়ায় ছাউনি ছাড়া খালি ভিটায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৭০ বছর বয়সি কুলছুম বিবি। বাড়ির বাসিন্দারা জানান, আমাদের ছেলে মেয়েরা এখানের স্কুলে পড়ছে। আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই তাহলে বাচ্চাদের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তবে আর থাকা যাবেনা এখানে। সামনের পূর্নিমার জো’তেই ভেঙ্গে যাবে বাড়ি।
এছাড়াও রামনেওয়ার লঞ্চঘাটের পাশে কয়েকটি বাড়ি ঘুড়ে দেখা গেছে, গত ৩ মাস পূর্বে নদী ভাঙ্গন রোধে বরাদ্ধকৃত ব্লকের কথা শুনে অনেকেই ছিলেন পুরনো বাড়িতে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না দেখে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ার ভাটা আর জলাবদ্ধায় অতিষ্ট হয়ে মাস খানেক আগে অনেকেই ঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছেন নতুন ঠিকানায়। যারা নতুন ঠিকানায় চলে গেছেন তারা হলেন, মিরাজ মিয়া, আরিফুল হক, তৌহিদ, শরিফুল হক, জাহিদ, নসু, বাবুল নাজিমুদ্দিন, গিয়াসুদ্দিন, মোস্তাফিজ, আলাউদ্দিন সিরাজ।
এদের মধ্যে অনেকেই জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে টাকা বাজেট হয়েছে শুনেছি ৩ মাস আগে। কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি না দেখে আমরা চলে গেছি অন্যত্র। যদি এর মধ্যে কাজ শুরু হতো তাহলে আমরা কষ্ট করে হলেও পুরনো বসত ভিটায় থাকতাম।
এব্যাপারে মনপুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম জানান, মনপুরায় নদী ভাঙ্গন রোধে বরাদ্ধকৃত ১৯২ কোটি টাকার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেছে। এই মাসের মধ্যে টেন্ডার দেয়া হবে। তবে সামনে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সম্ভবত নভেম্বরে কাজ শুরু হতে পারে।