আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস
লালমোহন বিডিনিউজ , সোহেল আজিজ ঢাকা :আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির অহঙ্কার। ১৯৭১ সালের এ দিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও আনন্দের দিন, লাখো শহীদের রক্ত নদী পেরিয়ে আসা শোক আর অশ্রু এবং মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর সশ্রদ্ধ বেদনারও দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ২৪ বছরের ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক নেতৃত্ব প্রদান করে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে নানা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের পথ গ্রহণ করে স্বাধীনতাকামী শান্তিপ্রিয় ও নিরস্ত্র বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা পরিচালনা করে। বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকা-ের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাঙালি জাতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে বরাবরের মতো যথাযথ মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন।
মহান বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তিন দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত সকল থানা শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় র্যালিসহ পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন ও সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকেল ৩টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানম-ি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় মিছিল শুরু হবে।
এছাড়া সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৭ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
এছাড়া আগামী ১৮ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজধানীর ধানম-িস্থ রবীন্দ্রসরোবরে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য শিল্পীবৃন্দ সংগীত পরিবেশন করবেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের জন্য দেশের সকল শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।