সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন | শিরোনাম | সর্বশেষ » শীতে খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত চরফ্যাসনের গাছিরা
শীতে খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত চরফ্যাসনের গাছিরা
লালমোহন বিডিনিউজ ,কামরুজ্জমান শাহীন,চরফ্যাসন : ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর আলাদা আলাদা স্বাদ রয়েছে। তেমনি শীত ঋতুর একটি সুমিষ্ট স্বাদ হচ্ছে খেজুর গাছের রস। চরফ্যাসনে শীতের শুরুতেই খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রাম এলাকার গাছিরা। শীতের তীব্রতা এখনো দেখা না দিলেও একটু বেশি লাভের আশায় এর মধ্যে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন অনেকেই। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন রস সগ্রহকারী গাছিরা।
খেজুর রস ও গুড়ের জন্য চরফ্যাসন এক সময় বিখ্যাত ছিল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড়। কয়েক বছর আগেও চরফ্যাসনের বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই পাশ দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোনো পরিচর্চা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এই সব খেজুর গাছগুলো। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু গুড়। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা ক্ষেত-খামারের পাশে এমনকি রাস্তাঘাটের পাশে আর আগের মতো খেজুর গাছ দেখা মিলে না। আমাদের অসচেতনতার কারণে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে পরিবেশবান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এই খেজুর গাছ। আগের সময়ে অনেকেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও আজ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ গাছিরা তাদের এই পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। হাতে গোনা কজন এখনো ধরে রেখেছেন এই পেশা।
উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের আঃ গফুর জানান, আমরা জাতে বাঙালি। মৌসুমভিত্তিক কিছু খাবারের প্রতি আমরা দুর্বল। খেজুর গাছের রসের প্রতি আমাদের দুর্বলতা এখনো আছে। আমার বাবা পেশা ছিল এই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা। বাবার মৃত্যুর পর আমি পেশাটি ধরে রেখেছিলাম কিন্তু দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পেশাটি বর্তমানে ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক গাছি জানান আমরা খেজুর গাছের কথা ভুলে গেছি। আমাদের উচিত অন্যান্য বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি খেজুর গাছ রোপণ করা। দিন দিন আমরা অসচেতনার কারণে যে পরিমাণ খেজুর গাছ নিধন করছি সমপরিমাণ খেজুর গাছ আমাদের রোপণ করা উচিত।
আমাদের উচিত আগামী প্রজন্মের জন্য অন্যান্য গাছের পাশাপাশি বেশি বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো। তারা আরো জানান, গ্রামের মানুষকে বেশি বেশি করে খেজুর গাছ রোপণ করার বিষয়ে উৎসাহিত ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসা উচিত। তাছাড়া প্রতি বছর আমরা যে পরিমাণে খেজুর গাছ কেটে ফেলছি তাতে আর কয়েক বছর পর এই খেজুর গাছের রস পাওয়া যাবে কিনা তা আমরা জানি না।
পূর্বে আমরা প্রচুর পরিমাণ খেজুরের রস পেতাম আর সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করতাম আর এখন রসের পরিমাণ কমে যাওয়ায় কিছু অসাধু গাছিরা রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। খেজুর গাছের এই সংকট নিরসনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে সাধ্যমতো খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে।