মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » ভোলা | শিরোনাম | সর্বশেষ » ভোলা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নিজেরাই বড় দালাল
ভোলা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নিজেরাই বড় দালাল
লালমোহন বিডিনিউজ ,ভোলা প্রতিনিধি:ভোলা পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য। এতদিন বহিরাগত দালালদের হয়রানির শিকার হলেও এবার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই বড় দালালে পরিনত হয়েছে। আর এই দালালির কাজে অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহযোগীতায় চলছে এমন অনিয়ম। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামঅঞ্চল থেকে আসা সাধারণ মানুষ। সক্রিয় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে আবেদনকারীদের সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
নির্ধারিত অঙ্কের বাড়তি টাকা দালালদের হাতে ধরিয়ে দিলেই আবেদনপত্র জমা হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাড়তি টাকা তাদের মন মতো না দিলে ইচ্ছে করে ভুল করে দিচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকদের। আর অবৈধ লেনদেনের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত একাধিক সিন্ডিকেট।
দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেয়ার পরও কারণে-অকারণে এবং অযৌক্তিকভাবে সেসব আবেদনপত্রে লাল কালির চিহ্ন দিয়ে আবেদনপত্রগুলো বাতিল করা হচ্ছে। আর এ কারণে সহজে দালালের খপ্পরে পড়ছেন আবেদনকারীরা। লাল কালির অজুহাতে দালালরা আবেদনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছে। এ পরিমাণ টাকা দিলেই লাল কালি চিহ্নিত আবেদনপত্র বৈধ ও জমা হয়ে যাচ্ছে। এর পরপরই ছবি তোলার তারিখও পেয়ে যাচ্ছেন দ্রæতার সহিত। এমনকি দ্রæত তাদের পুলিশ রিপোর্টও হয়ে যাচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিসের হয়রানির শিকার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের মো: হাসনাইন জানান , আমি আমার মাকে নিয়ে ওমরা হ্জ্ব করতে যাওয়ার জন্য ভোলাতে পাসপোর্ট করতে আসি। পাসপোর্ট করতে আসলে আমার কছে পাসপোর্ট এর জন্য ৩৪৫০ টাকা সহ অফিস খরচের কথা বলে সর্বমোট ১০ হাজার টাকা ন্যায়। পরে আমাকে পাসপোর্ট করে দিলেও ইচ্ছে করে আমার পাসপোর্টে ভুল করে দেয়। পরে সেই পাসপোর্ট এম্ভ্যাসী থেকে ফিরোত দিয়ে দেয়। পরে আবার জরুরী ভিত্তিকে করার জন্য আবেদন করলে তারা আবার আমার কাছ থেকে পাসপোর্ট খরচ বাবদ জন্য আবারও বাড়তী ১০ হাজার টাকা ন্যায় কিন্তু তারপরেও আমার পার্সপোট করে দেয়নি। এখন তারা বলে সাভার্রে সমস্যা কথা বলে।
হাসনাইন হতাশার শুরে বলেন, আমি দেড় মাস আগ থেকে পাসপোর্ট করার জন্য গুরোছি। এর জন্য বাড়তী টাকা পর্যন্ত নিয়েছে তারা আমার কাছ থেকে। তার পরেও কেন আমার পাসপোর্ট হলোনা? আমার হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই । এখন আমার মা কে নিয়ে কিভাবে ওমরা হজ্ব করতে যাবো।
তিনি বলেন ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো: আব্দুর রাজ্জাক ও তার পিয়ন ইমরান কে দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েও তারা আমার পাসপোর্ট সময় মতো করে দেয়নি। এখন আমার কাছ থেকে ঢাকা থেকে জরুরী অবস্থায় করে দেয়ার কথা বলে বাড়তি মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে।
এব্যাপরে আরেক ভুক্তভোগী এম শাহরিয়ার জিলন বলেন, কিছুদিন আগে সরকারি নিয়ম মেনে পাসপোর্ট করতে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি নানান ধরনের হয়রানির শিকার হই। অফিসের ভিতরে কর্মরত কিছু দালাল আমার কাছ থেকে সরকারের নির্ধারিত টাকা চেয়ে বাড়তি টাকা চায়। আমি ঐ টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমার ফরমে ভুল দেখিয়ে তা বাতিল করে দেয়। এভাবেই আমার মতো অনেক সাধারন মানুষ পাসপোর্ট করতে এসে এই দালালদের দ্বারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমি ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দালাল দারা সাধারন মানুষের হয়রানি বন্ধে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ভোলাতে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর এ অভিযোগের তীর ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো: আব্দুর রাজ্জাক সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকেই। এক্ষেত্রে অফিসের ভেতরের দাললেদের পাশাপাশি বাইরের দালালদের ব্যবহার করা হয়।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, পাসপোর্ট অফিসে টাকার ভাগ পান সর্বনিম্ন কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত । কর্মকর্তা-কর্মচারী আর দালাল মিলে সেখানে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। পুরো লেনদেনের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এমন কর্মকান্ড। এদিকে মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দালালদের পাকড়াও করলেও সিন্ডিকেটের তৎপরতা থেমে নেই। ভুক্তভোগীরা এর অবসান চেয়েছেন।
ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ব্যাপারে কেউ তার কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ অনুসারে হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।