বুধবার, ৬ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | জাতীয় | শিরোনাম | সর্বশেষ » দলীয় সরকারের অধীনে আর জাতীয় নির্বাচন নয়
দলীয় সরকারের অধীনে আর জাতীয় নির্বাচন নয়
সোহেল ঢাকা : সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশনে কারচুপির নির্বাচন ও ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে ইসি ও সরকারের ভূমিকায় হতাশ হয়েছেন দেশবাসী, এমনকি বিশ্ববাসী। নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের যে সাংবিধানিক নিয়ম রয়েছে তার যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে সরকার পতনের টানা আন্দোলনের ভেতরেই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দেশবাসীর মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল তাতেও ছাই পড়েছে। তিন সিটি নির্বাচনের পর দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে দূরত্ব কমার যে সম্ভাবনার কথা ২৮ এপ্রিলের আগে বলাবলি হচ্ছিল তাও আর ঠিক থাকলো না।
সিটি নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের লোকেরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কেন্দ্রগুলোর ভেতরে যে তা-ব চালিয়েছে তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণসহ ইসিতে অভিযোগ দায়েরের পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে মর্মে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার লিখিত স্বীকারোক্তিসহ অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। এসব অভিযোগ পাত্তাই দিলো না নির্বাচন কমিশন। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দল সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল করে সীমাহীন অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছিলো। তাও আমলে নেয়নি কমিশন। ভোটে অনিয়মের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে বিদেশিরা। কিন্তু শ্রবনশক্তিহীন প্রতিবন্ধী’র মতো কাজ করে যাচ্ছে ইসি। এসব কারণে সরকারের আজ্ঞাবহ ইলেকশন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট এ কমিশনারদের অধীনে আর কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়া কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুধু তাই নয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে আর কোনো যুক্তি থাকলো না।
সিটি নির্বাচনের অবজারভেশন জানতে চাইলে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ সুজনের সাধারণ সম্পাদক ও গবেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘কী আর বলার আছে বলেন’? প্রশাসন দলীয়, কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট সেখানে আর কী আশা করতে পারেন?
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দলীয় সরকারে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই দূরহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনের যে দাবি বিএনপি করে আসছে সে দাবির প্রতি তার কোনো সমর্থন নেই। তবে ড. মজুমদার বলেন, দক্ষ, সাহসী এবং যোগ্য কমিশন থাকলেও দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়াও সম্ভব নয়। আর নির্বাচন কমিশন যদি বর্তমান কমিশনের মত আজ্ঞাবহ ও পক্ষপাতদুষ্ট হয় তাহলে এর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই উঠেনা।
একই বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (বামাসপ)-এর প্রেসিডেন্ট এএইচএম নোমান’র সঙ্গে। যিনি সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি ভোট কেন্দ্রে নিজে গিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র একটিতে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পোলিং এজেন্ট দেখেছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ’ এর কর্মীরাও ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ভোটের আয়োজন করেন নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে কমিশন দুর্বল ও আজ্ঞাবহ হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। টানা আন্দোলন ছেড়ে সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকতে পারলে ভালো হতো। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া শুধু নয়, ভয়ভীতির কারণে অনেকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি।
জাতীয় পার্টির মতো বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যারা সরকারে রয়েছেন এক্ষেত্রে তাদেরই বেশি দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন এএইচএম নোমান।
দু’টি বড় রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে দূরত্ব কমাতে হলে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে আজ একসভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকার আবার তিন সিটিতে একটি তামাশার নির্বাচন করলো।
তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছি। অথচ আজ জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জনগণের ভোটাধিকারের চাইতে ক্ষমতাই বড়। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশ ভয়াবহ সংকটে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।