
বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » শিক্ষা | শিরোনাম | সর্বশেষ » এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পুরনো স্কেলেই
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পুরনো স্কেলেই
লালমোহন বিডিনিউজ , সোহেল ঢাকা :এমপিওভুক্ত প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বিল পুরনো স্কেলেই তৈরি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
বেতন বিল তৈরি ও তাতে স্বাক্ষর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে সোমবার ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। এর ফলে ফেব্রুয়ারির বেতনও নতুন স্কেলে না পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বেড়ে গেলো। এরিয়ার তো দুরের কথা । অথচ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকের সাংবাদিককে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে ফাহিমা খাতুন সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনই হবে নতুন স্কেলে। দেরি দেরি বলে যারা উৎকন্ঠিত তাদের কড়া সমালোচনা ও তার ভাষায় ‘বিভ্রান্তি’ না ছড়ানোর উপদেশ দিয়েছিলেন ফাহিমা।
মঙ্গলবার একাধিক কর্মকর্তা পুরনো পদ্ধতিতে বেতন বিল প্রস্তুত ও তা শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এমপিওর চেক ছাড় করা হয় মাউশি অধিদপ্তর থেকে।
তবে, মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে বুধবার বা বৃহস্পতিবার যদি টাকা পাওয়া যায় তাহলেও নতুন স্কেলে বেতন দেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে মাউশির মহাপরিচালক দেশে ফেরা ও নতুন বেতন বিল তৈরি ও পাঠানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মহাপরিচালক ১ মার্চ দেশে ফিরবেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক অতিরিক্ত টাকা ছাড় হয়নি।
জানতে চাইলে প্রবীন শিক্ষক নেতা ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত রয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও নতুন স্কেলে বেতন দেওয়া হবে তথাপি শুধু উদ্যোগের অভাবে মাসের পর মাস পিছিয়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পাঠদানে। শিক্ষকরা সারাদিন মন খারাপ করে থাকবেন আর যতদিন না পর্যন্ত নতুন স্কেলের টাকা হাতে নগদ না পান ততোদিন সন্দেহের চোখে দেখবেন সবকিছু।
শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে সচিবের ভূমিকা পালনের আহবান জানান তিনি। বর্তমান শিক্ষাসচিব শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাবেক পিএস।
প্রায় ৩৮ বছর বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মাজহারুল হান্নান আরো বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যেহেতু রয়েছে সেহেতু যত আগে হাতে নগদ করতে পারেন ততই শিক্ষকদের জন্য মঙ্গল।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ আউয়াল সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি দুখজনক, অবহেলা ও অমর্যাদাকর, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
সাবেক শিক্ষক নেতা ও বর্তমানের এনজিওর মালিক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংবাদ মাধ্যমে তার পিওন অমিতাভের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে বলেছিলেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুরাহা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন। আজ মঙ্গলবার পুরনো স্কেলে বেতন বিল প্রস্তুত করার বিষয়ে কাজী ফারুকের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকারের আমলে সবচাইতে বেশি সুবিধা নিয়েছেন কাজী ফারুক। কোনও ভূমিকা না রাখতে পারলেও জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটিতে তার নাম থাকায় ওটাকেই পুঁজি করে খাচ্ছেন কাজী ফারুক।
অপর নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু ২ ফেবরুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, একটি মহল দেরি হওয়ার গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আসলে ফেব্রুয়ারির বেতনের সঙ্গেই নতুন স্কেল পাওয়া যাবে বলে শতভাত নিশ্চিত বলে জানিয়েছিলেন শাহজাহান আলম সাজু। তিনি তৃতীয় মেয়াদে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব নিযুক্ত হয়েছেন কয়েকমাস আগে।
জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও এম এ পাসের ভুয়া সনদ ধরা পড়ার ফলে চাকুরিচ্যূত হয়ে আর কখনো শিক্ষকতা পেশায় যোগ না দেওয়ার শর্তে সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পাওয়া নেতা সাবেক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়াকে মঙ্গলবার দেখা গেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকজন শিবিরকর্মীকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে।
শিক্ষক নেতা নজরুল ইসলাম রনি বলেছেন, ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নতুন স্কেলে বেতন পেতে দেরি হচ্ছে যা নিন্দনীয়।
শিক্ষা গবেষক মোবাশ্বের হাসান বলেছেন, মাউশির মহাপরিচালক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষকে প্রেষণে বসানো উচিত। কয়েকবছর যাবত সরকারি কলেজের শিক্ষকরা মাউশি অধিদপ্তরের শিক্ষা প্রশাসনে চরম অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। টাউটবাটপাররা এমপিওর নামে সরকারি কোষাগার লুটে নিলেও তা বন্ধ করার ক্ষমতা ও ইচ্ছা কোনটিই নেই সরকারি কলেজের এসব শিক্ষকদের।