সাত বছর পর নৌকা-ধানের লড়াই আজ
লালমোহন বিডিনিউজ,রাশেল সিকদার ঢাকা :দীর্ঘ সাত বছর পর নৌকা ধানের শীষের লড়াই আজ। নির্বাচনী এ লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করছেন সারা দেশে ২৩৪টি পৌরসভায় দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনেক দিন পর নৌকা-ধানের লড়াই দেখার অপেক্ষায় সমগ্র দেশবাসী।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শেষ হয় প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য মাঠে আছে বলে জানান নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা শাখার উপ-সচিব শামসুল আলম।
পুলিশ প্রায় ৪৫ হাজার, বিজিবি ৯ হাজার ৪১৫, র্যাব ৮ হাজার ৪২৪ কোস্টগার্ড ২২৫ আনসার ভিডিপি ৪৯ হাজার ৭২৮ এবং ব্যাটালিযন আনসার ৪ হাজার ৫১২ সব মিলিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ সদস্য মাঠে থাকছে বলে ইসির এই উপ- সচিব জানান।
এছাড়া গত সোমবার থেকে মাঠে রয়েছে ১ হাজার ২০৪ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটের দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নির্বাচনী মাঠে থাকছে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ন আনসার সার্বক্ষণিক থাকছে। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকছে। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে ও অপরাধ দেখভালে রয়েছে নির্বার্হী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এবারের নির্বাচনে শুধু মেয়র পদগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে। কাউন্সিলর পদগুলোতে আগের মতোই নির্দলীয় ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলবে। পৌরসভা আইনের এই নতুন বিধান নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনার পরেও শেষ পর্যন্ত সবাই এটা মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের প্রধান শরিক বিএনপিসহ প্রায় সব দলই এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে নির্বাচনী পরিবেশের অবনতি ঘটেছে।
তবে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনের একদিন আগে বলেছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকবে। বিরোধী দলের অফিস ও প্রার্থীর ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারে বাধা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ইত্যাদির কথাও তুলে ধরেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ওপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে।
গত নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বচানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে সরকার কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। তবে সৈয়দ আশরাফ আশক্সক্ষা প্রকাশ করে বলেছেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে তাকবে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দলের ২৩ জন মন্ত্রী ও সাংসদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারি দলের নয় এমন প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও উঠেছে। টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার নির্বাচনে নয়টি ভোটকেন্দ্রের পাঁচটিতে চারজন নৈশপ্রহরী ও একজন পিয়নকে পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনেক পৌরসভায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে; অন্তত ৫০টি পৌরসভায় সংঘাতময় পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে সহিংসতার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ চলাকালে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেন সুষ্ঠ ও অবাধ নিরপেক্ষ হয় এটাই সাধারণ জনগনের প্রত্যাশা।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন যতো প্রার্থী: ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর ৮ হাজার ৭৪৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২হাজার ৪৮০ জন। তবে এদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মেয়র পদে ৭ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র পদে ২০ দল ও সাড়ে ৯শ’ প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে। দলীয় প্রার্থী ৬৬০ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৫ জন। এতে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া এলডিপি ১ জন, জেপি ৬ জন, সিপিবি ৪ জন, ন্যাপ ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ জন, বিকল্পধারা ১ জন, জাসদ ২১ জন, বাসদ ১ জন, তরিকত ফেডারেশন ১ জন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১ জন, খেলাফত মজলিস-এর ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
এ ছাড়াও সারাদেশে পৌর নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোট কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ২১ হাজার ৭১। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৫৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবার মোট ভোটার রয়েছে প্রায় ৭১ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ জন। ভোট গ্রহণ করবেন ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা। এসব পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।