শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ভোলা | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » সমস্যায় জর্জরিত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বেহাল স্বাস্থ্যসেবা।।লালমোহন বিডিনিউজ
সমস্যায় জর্জরিত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বেহাল স্বাস্থ্যসেবা।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ: ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের দায় সারা দায়িত্বে ব্যাহত হচ্ছে নানা ধরনের সেবা। সমস্যা সমাধানে তিনি কোনো দায়িত্ব নিতেই রাজি নন, কোনো রকমে দায় সারা দায়িত্ব পালন করে দিনপার করছেন বলেও দাবি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট অনেকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং স্টাফ জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং জল মঘ্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গন। যার ফলে খুব সহজেই ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি ইউএইচএফপিওকে জানালেও তিনি প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
অন্যদিকে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকলেও দুই চিকিৎসককে অ্যাটাচমেন্ট দেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, এখানে চিকিৎসকের সংকট। অথচ ইউএইচএফপিও দুই চিকিৎসককে অ্যাটাচমেন্টে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। এ জন্য আমরা যারা এখানে রয়েছি তারা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বক্তব্য দেওয়া এই চিকিৎসকরা আরো জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্ধ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব রোগীরা আসেন, তাদের অনেকেই দরিদ্র। এসব সেবা বন্ধ থাকার কারণে রোগীরা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন। অথচ ইউএইচএফপিও আন্তরিক হলেই এসব সেবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই দেওয়া সম্ভব। তবে তার কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে; তিনি কোনো দায়িত্ব নিতেই রাজি নন, কোনো রকমে দায় সারা দায়িত্ব পালন করে দিনপার করছেন তিনি।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের অজুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান। এমনকি যেদিন অফিসে আসেন, সেদিন আবার দুপুর দেড়টার মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন তিনি। যার কারণে হিসেবে রয়েছে ভোলায় তার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা। অথচ তার থাকার কথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি বাসভবনে। তবে তিনি না থাকায় ওই বাসভবনে থাকছেন তার গাড়ি চালক!
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক স্টাফের দাবি, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাটি চরম অনিরাপদ। এখানের বাউন্ডারির অধিকাংশ স্থানই ভেঙে রয়েছে। যার কারণে রাতের আঁধারে এসব স্থানে দিয়ে জুয়াড়ি এবং মাদক সেবীরা ভেতরে প্রবেশ করে আড্ডা জমায়। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি কোয়ার্টারে বাস করা চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফরা। এ সমস্যাও সমাধানের কোনো আগ্রহ নেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের।
এসব বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং জল মঘেœর ব্যাপারে বলেন, হাপাতালের মধ্যে ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। মাজখানে গর্ত হয়ে রয়েছে, এই গর্ত না ভরানো পর্যন্ত পানি জমার সমস্য সম্ভব হবে না। এরপরও আমরা ড্রেনেজ সিস্টেম করে যতটুকু সম্ভব পেরেছি পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করেছি।
চিকিৎসকদের অ্যাটাচমেন্ট দেওয়ায় বিষয়ে বলেন, এটা হায়ার অথরিটি থেকে হয়। হায়ার অথরিটি থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয় আমরা তা মাননে হয়।
এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও অপারেশন থিয়েটার বন্ধের ব্যাপারে বলেন, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে এখানের অ্যানেস্থেসিয়ার ডাক্তার ও সার্জন নেই। ইসিজি চালু রয়েছে। এক্সরে মেশিন ২০০৫ সালের পর নষ্ট হয়ে আছে। এরপর কোনো ম্যানপাওয়ার আসে নাই। চালুও হয়নি। এই বিষয়গুলো চালু করার জন্য আমরা বারবার হায়ার অথরিটিকে ইনফর্ম করেছি। এইগুলো ইনস্টল করার জন্য। মেশিনারি যেমন থাকতে হবে সেইসাথে সেগুলো চালানোর জন্য দক্ষ জনবলও থাকতে হবে।
বাউন্ডারি ভাঙার বিষয়ে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মেজরমেন্ট করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। এটি অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা মেরামতের ব্যবস্থা করবো। বখাটেরা আড্ডা দেয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বলেছি। অভিযান করে কয়েকজনকে ধরেও নিয়েছে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও সরকারি কোয়ার্টারে না থাকার ব্যাপারে, সরকারি কোয়ার্টারে থাকার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া আমার জন্য যে কোয়ার্টার রয়েছে সেটা বসবাসের জন্য অনুপযোগী। রিপিয়ারের জন্য মিনিষ্টিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমি প্রতিদিন সকাল ৮ টার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮টা পাঁচ এর মধ্যে অফিসে আসি। আমার অফিস হচ্ছে ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত। আমি কখনো নয় টায় অফিসে আসিনা এবং রেগুলার অফিস করি। অফিস আওয়ার ব্যতিত এবং সরকারি কাজ ব্যাতিত সাধারনত আমি অফিসে থাকি না।