বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » জেলার খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » পাখিদের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ঝালমুড়ি বিক্রেতা বিল্লালের।।লালমোহন বিডিনিউজ
পাখিদের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ঝালমুড়ি বিক্রেতা বিল্লালের।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ : মো. বিল্লাল হোসেন (৩৮)। ভোলার লালমোহন উপজেলার দেবীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় পাঁচ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে তিনি গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন পাখিদের সঙ্গে। বর্তমান প্রতিদিন তার কাছে খাবার খেতে ছুটে আসে শত শত দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পাখি। ঝালমুড়ি বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের দেবীরচর এলাকার নূর আলী মুন্সী বাড়ির মোক্তার মুন্সীর ছেলে। বিল্লালের কাছে খাবার খেতে আসে দোয়েল, চড়–ই, ঘুঘু, শালিক ও বুলবুলি পাখি।
ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রথম দিকে অল্প কিছু পাখি আসতো খাবার খেতে। তবে বিগত ছয় মাস ধরে প্রায় পাঁচশত পাখি নিয়মিত খাবার খেতে আসছে। এসব পাখিদের প্রতিদিন নিজের বানানো ঝালমুড়ি তিনবার খেতে দেই। এমন কি বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও এসে পাখিদের খাবার দিয়ে যাই। পাখিদের খাবার দিতে প্রতিদিন আমার অন্তত দেড় থেকে দুইশত টাকা খরচ হয়। তবুও ভালো লাগে। কারণ এসব পাখির কিচির-মিচির শব্দ এবং তাদের উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করে। এতে করে মনেও এক ধরনের শান্তি মিলে। যার জন্যই পাখিদের নিয়মিত খাবার দিচ্ছি।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন এই বিদ্যালয়ের আঙিনায় বসে প্রায় ১২ শত টাকার ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারি। যেখান থেকে খরচ বাদে সাড়ে তিনশত টাকার মতো লাভ হয়। এই লাভের টাকাতেই চলে আমার মা, তিন সন্তান ও স্ত্রীর সংসার।
দেবীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং সহকারী শিক্ষক মাহমুদ হাসান লিটন বলেন, বিল্লাল আমাদের বিদ্যালয় আঙিনায় বহুদিন যাবৎ ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। তার কাছে প্রতিদিন শত শত পাখি খাবার খেতে আসে। এসব পাখির উপস্থিতি আমাদের থেকেও ভালো লাগে। এতো পাখির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই সুন্দর মনের অধিকারী হতে হয়। আমরা মনে করি- বিল্লাল একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা হলেও তিনি অত্যান্ত সুন্দর মনের অধিকারী।
বদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদ উল্যাহ মেলকার জানান, দেবীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় বিল্লাল নামে এক যুবক দীর্ঘদিন যাবৎ ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে গিয়ে নিয়মিত খাবার দিয়ে তিনি দেশীয় জাতের বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এটি একটি ভালো কাজ। ভবিষ্যতে তাকে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করবো। যাতে করে সে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আরো সুন্দরভাবে দিন পার করতে পারেন।
এ বিষয়ে লালমোহনের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বেল্লাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে দেশীয় প্রজাতির পাখি বিলপ্তির পথে। এর কারণ হচ্ছে পাখির প্রতি মানুষের আন্তরিকতার অভাব। তবে লালমোহনের এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা খাবার খাইয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। যা পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া সকলের প্রতি আহবান; প্রতিটি মানুষই যেন পশু-পাখির প্রতি যতœবান হয়ে উঠে।