
সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ভোলা | শিরোনাম | সর্বশেষ » আজও কান্না থামেনি ভোলায় জেলে পরিবার গুলোতে
আজও কান্না থামেনি ভোলায় জেলে পরিবার গুলোতে
লালমোহন বিডিনিউজ ,ভোলা সংবাদদাতা : আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে ভোলাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায় সুপার সাইক্লোন সিডর। সিডরের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো সেই দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারছেননা সেখানকার মানুষ। সিডরের কথা মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন অনেকে। স্বজন হারানোদের ব্যাথায় এখনো আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে সেখানে। নিখোঁজ জেলেদের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। অনেকে আবার সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না কেউ।
ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কূলগাজী গ্রামের সহিজল মাঝি সিডরে আঘাত হানার সময় মাছ ধরতে গিয়ে ছিলেন সাগরে। তিন মেয়ে তিন ছেলে, মা-বাবা আর স্ত্রী রেখে সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। আসবেন কিনা তাও জানে না তার পরিবার। এখনো তার ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন সহিজলের স্ত্রী। স্বামীর কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
সহিজলের স্ত্রী বলেন, সিডরের সময় সে নদীতে গেছে। বোটে মাছ ধরতে। সে বোট পইর্যা গেছে। আর সে ফিরর্যা আসে নাই। আর আসবে নাকি হেও জানিনা, আল্লাপাক জানে। ছেলে-সন্তান নিয়া খুব অসহায় আছি। সংসার খুব কষ্টে চলে।
একই গ্রামের কাদির গাছালির মেয়ে জামাই মিলন মাঝিও মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। নিজে সাগরে গিয়ে পরিবারকে ফেলে দিয়ে গেলেন বাস্তবতা নামের অথৈ সাগরে। তার স্ত্রী-পূত্র কন্যা সবাই এখন ছন্নছাড়া সংসারহারা।
মেয়ের বাবা কাদির গাছালি বলেন, সিডরের পরে এহন মাইয়্যায় এক পোলা এক মাইয়্যা লইয়্যা চিটাগাংএ মাইশ্যের বাসায় কাজ-কর্ম কইর্যা খায়। আর দুই পোলা বাংলাবাজার এতিম খানায় আছে।
সিডরে কেউ বাবা-মা, কেউ সন্তান, কেউবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোককে সঙ্গী করে বেঁচে আছেন জীবন্ত লাশ হয়ে।
সেই ভয়ংকর সিডরের আঘাতে ভোলার জেলা সদরসহ চরফ্যাশন, মনপুরা ও বোরহানউদ্দিনে ৫২ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাধ। এছাড়া কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। নিহত হয় ৪২ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত নি:স্ব অনেক পরিবার গৃহ নির্মাণ করতে না পেরে ঝুপড়ি ঘরে বেড়িবাধে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছেন।
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক সেলিম রেজার সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ভোলায় যে কোন সময় সিডরের মত দুর্যোগ আসতে পারে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে। আমরা প্রতিমাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করি। ইউএনওদেরকে সভা করতে বলি। বিপদ সংকেত ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে জনগণকে জানিয়ে দেই। জেলে-নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট, রেডিও রাখার পরামর্শ দেই। ভোলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রসউত রাখি। লোকজনকে সেখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা রাখি। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণ আমাদের কাছে। আমরা এসব করার কারণে বেশ সফলতা পেয়েছি। বিগত মহাসেনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। বহুলোককে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।