শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ভোলা | শিরোনাম | সর্বশেষ » জাটকা ধরা বন্ধ না হলে,কখনই মিলবে না ইলিশ
জাটকা ধরা বন্ধ না হলে,কখনই মিলবে না ইলিশ
লালমোহন বিডিনিউজ , আলআমিন ভোলা : অনেকদিন অগের পুরাতন মৎস্য অধিদপ্তরের একটি বিজ্ঞাপনের সংলাপ‘‘জাটকা ধরে ফটকা’’ লোক। টিভির বিজ্ঞাপনে এই সংলাপটি একসময় বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল গাঁয় গ্রামের মানুষের মধ্যে। জেলেরাও বেশ সুন্দর ভাবে লুপে নিয়েছিল। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ বঙ্গপসাগরের জেলে যুবক আব্বাস আলী। সংলাপটির সংগে নিজের মনের খোব যুক্ত করে বলেন।
‘‘যারা খায় জাটকা তারাও ফটকা’’। উপজেলার নবগঠিত ঢালচর ইউনিয়নের যুবক রাজনৈতিক কর্মী নান্নু বলেন, একদিন এক জেলের কাছ থেকে ৫০টাকায় প্রায় ১০০পিজ জাটকা কিনেছেন। ১০০পিজ জাটকা বড় ইলিশের দাম কত হত? জাটকার নিধনযজ্ঞের ভয়বহতা বর্ণনা করতে গিয়ে চুন্নু অনেকটা এমনই বলেছেন।
তিনি জানান, এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার টন জাটকা নিধন হচ্ছে। বঙ্গপসাগরের মোহনায় এবং মেঘনা ও তেতুলিয়ায় মাছ ধরে এমন জেলেদের একটি গুরূপ জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়ায় বেশ ক্ষুদ্রু। কারণ এই জাটকা ধরাই জেলেদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। তারা আমাদের কাছে খোব প্রকাশ করে বলেন,ঢাকার শহরেই জাটকার মূল বাজার। এখনও রাজধানীর মানুষ এর মূল ক্রেতা।
এই জন্যই চরফ্যাশনের বেতুয়া, ঘোষের হাট, বাবুর হাট ও ঢালচর থেকে টলার ও লঞ্চ ভর্তি জাটকা ঢাকায় চলে যায়। মেঘনা ও তেতুলীর পাড়ের স্থানীয় মানুষ এটি বিশেষ পছন্দ করেন না। তাদের বিশ্বাস ঢাকার বাজারে জাটকা বিক্রি বন্ধ করা হলে ক্রেতার অভাবেই নদীতে এই মাছ স্বীকার বন্ধ হয়ে যাবে। আবার কারো কারো অভিমত মেঘনার সম্ররাট বা গডফাদারদেরকে পাকড়াও করতে পারলে জাটকা নিধন বন্ধ হবে। কারণ আজ কাল জাটকা মৌসুমে এরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন নদী ও শাখায় মাছ বেঁচা কেনা করে। আর দূর্নীতিবাজ প্রশাসনকে নিয়ে ভাগ ভাটওয়ারা করে খায় দেশের রূপালী সম্পদ।
ইলিশ ধংসে এই জাটকা নিধন যোগ্যটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ন। দেশের প্রচলিত ১৯৯০সনের আইনে ২৩সেমি পর্যন্ত আকারের জাটকা ইলিশ নিধন, ৪.৫সেমি.বা তার চেয়ে কম ফাঁসের কারেন্ড জাল ব্যবহার নিশেধ তার পরও সত তদারকি কর্তৃপক্ষের অভাবে এই নিধনযোগ্য,কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
একটি বড় মা ইলিশ প্রায় সারা বছর প্রজনন করে থাকে। তবে ইলিশের সর্বচ্চ প্রজনন হলো অক্টোবর। সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের মিঠা পানির নদীর অববাহিকায় ইলিশের আগমন শুরু হয়। ডিম ছাড়ার পর এরা আবার ফিরে যায় সমুদ্রে। ভাসমান ডিম ফুটে বেড় হয়ে আসা রেনু পোনা কিছু দিন নদীতে থাকার পর পরিনত হয় কিশোর ইলিশে। এই কিশোর ইলিশকে বলা হয় জাটকা।
যৌবন প্রাপ্ত হওয়ার জন্য এটি এক সময় সমূদ্রে চলে যায়। জাটকা দেখতে অনেকটা চাপলি মাছের মতো। আমাদের গাঁ গ্রামের বাজার গুলোতে বেশির ভাগ সময়ে এগুলো চাপলি হিসাবে বিক্রি হয় । যদিও জাটকা ও চাপলি মাছের পার্থক্য সনাক্ত করাও কঠিন নয়। জাটকার গাঁয়ে পার্শ্বরেখা বরাবড় গোলাকার কালো দাগ থাকে। এর আঁশ চাপলির চেয়েও বড়। দেহের পার্শ্ব রেখা বরাবর এর আঁশের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০পর্যন্ত হয়। চাপলির এর সংখ্যাটি হয় ৮০ থেকে ১২০পর্যন্ত। চাপলির চেয়ে জাটকার চোখের আকৃতিও অপেক্ষাকৃত ছোট। জাটকার মাথা লম্বাটে। অগ্রভাগ সূচালো। চাপলির মাথার আকৃতি অপেক্ষাকৃত খাটো। অগ্রভাগ ভোতা।
বাংলাদেশ মৎস গবের্ষণা ইনষ্টিটিউটের গবের্ষণা অনুযায়ী জাটকার দুইটি বিচরন ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হলো । মেঘনা নদীর সাটনল থেকে চাঁদপুর নীল কমল হয়ে হাজীমারা পর্যন্ত বৃস্তৃত। অরেকটি দূর্বলার চর থেকে পটূয়াখালী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত।
সরেজমিনে, অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়ার দৌলতখান, তজুমদ্দিন চরফ্যাশনের পশ্চিম এলাকার তেতুলীয়া নদীতে জাটকা স্বীকারের ব্যাপক সব আয়োজন যোগ্য। ভোলার এই অঞ্চলগুলোতে অনেকটা জাটকার খনি রয়েছে। জাকে জাকে জাটকা ইলিশ যখন মিঠা পানির নদীতে ঘুরে বেড়ায় তখনই স্বীকারী জেলেদের কারেন্ট জালে এরা ধরা পড়ে। জাটকা নিধনের ব্যাপারে এসব এলাকার মানুষ ও জেলেরা তেমন আগ্রহী না। তার পরও পেটের দায়ে নদীতে মাছ স্বীকার করতে গিয়ে অনিশ্চাকৃত ভাবে এই মাছ স্বীকার করে ফেলে।
তেতুলীয়া নদীর পাড়ের বশির মাঝি পেশায় জেলে, মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরে তার ভাষায়, প্রশাসনের দুর্বল নজরদারীর কারনে নদী ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর জার কারনে কমে যাচ্ছে তাদের আয়ের অবলম্বন।