শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » অরক্ষিত লালমোহনের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক।। লালমোহন বিডিনিউজ
অরক্ষিত লালমোহনের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধিঃ ডিসেম্বর মাস, বাঙালি জাতির মুক্তি ও মহান বিজয়ের মাস। ১৯৭১সালে ৯মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ মাসে বিজয় অর্জিত হয়। বাংলার আকাশে উড়ে লাল সবুজের পতাকা।
আর এই বিজয়ের মাসেও অরক্ষিত হয়ে পড়ে রয়েছে দেশকে পরাধীনতার শিকল ভেঙে মুক্ত করতে জীবন বাজি রাখা ভোলার লালমোহনের ১০জন বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিফলকটি।
লালমোহন পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র থানার মোড়স্থ উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের পাশে ও প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে দেশের এ দশ সূর্য সন্তানের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলকটি অবস্থিত।
বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন: শহীদ তানসেন মৃধা, শহীদ আব্দুল জলিল, শহীদ ছলেমান, শহীদ নুরুল ইসলাম, শহীদ রফিকুল ইসলাম, শহীদ মোঃ জামাল, শহীদ আঃ শহীদ, শহীদ আবুল হোসেন, শহীদ আমির হোসেন ও শহীদ আবু ছায়েদ।
দীর্ঘদিন যাবৎ এ ফলকটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড। পাশেই দখলে নিয়েছে পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানীরা। ফলকটি স্ট্যান্ডের পিছনে ও আড়ালে পড়ে যাওয়ার সুযোগে এখানে মলমূত্রত্যাগ করছে পথচারীরা। ফলে দূষণ ও অরক্ষিত হয়ে অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছে স্মৃতিফলকটি। আর এ ফলকটিকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যেন উদাসীন।
অথচ মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ধোয়ামোছা করা হয়েছিল, বীর শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়েছিল এ স্মৃতিফলকে। দিবসের শেষে এ ফলকটি পুনরায় বেদখল ও অরক্ষিত। যেন দিবস এলেই মনে পড়া বা দরদ বাড়ে কর্তৃপক্ষের।
১৯৯৩/৯৪ সালের দিকে লালমোহন পৌরসভা থেকে এ দশ বীর শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথমে প্রধান সড়কের পূর্ব পার্শ্ব জুড়ে এ ফলকটি স্থাপন করা হয়। তখন ফলকটিকে ঘিরে লোহার বাউন্ডারি, বাহারি গাছ ও আলোকসজ্জা করা হয়েছিল। পরে অদৃশ্য কারণে ফলককটির পার্শ্বের গাছ কেটে গ্রিল সরিয়ে জায়গা সংকীর্ণ করে দখলে মাতে অবৈধ দখলদাররা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকবছর পর ফলকের দুইপাশে মার্কেট নির্মাণ করে পৌরসভা। একপর্যায়ে স্মৃতিফলকটি পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ায় সেটাকে স্থানান্তর করে সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এখানেও অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকটি।
উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড এর সভাপতি আনম শাহ জামাল দুলাল বলেন, বিজয়ের ৫০বছরে এসেও বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন অবজ্ঞা আমাদেরকে ব্যথিত করে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯২/৯৩ সালের দিকে থানার মোড় এলাকার সড়কের পূর্ব পার্শ্বে বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকটি স্থাপিত। পরে পশ্চিম পার্শ্বে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। ওই এলাকায় বাসস্ট্যান্ড থাকায় খুবই ব্যস্ত এবং মানুষের পদচারণায় মুখর। তাই সেখানে স্মৃতিফলকটি অরক্ষিত থাকে বলে পৌরসভার কাছে দাবি জানানো হয়েছে, যাতে বাজারের চোরাস্তা এলাকায় ফলকটি স্থাপন করা হয়।
বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক উল্লেখ করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহে আলম কুট্টি বলেন, বিজয়ের মাসেও বীর শহীদদের স্মৃতিফলকটি অরক্ষিত ও অবহেলিত। এমন ঘটনায় আমরা লজ্জিত ও বিব্রত। তাই অতিদ্রুত স্মৃতিফলকটি সংরক্ষণ ও সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
লালমোহন পৌরসভার মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোনও দাবি/আবেদন পাইনি। তবে স্মৃতিফলকটি যেখানে আছে, এখানেই ভাল আছে। কারণ ফলকটি ব্যস্ততম এলাকায় হওয়ায় বীর শহীদদের নামগুলো সাধারণ মানুষসহ নতুন প্রজন্মের চোখে পড়ছে।
পথচারীদের মলমূত্রত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলায় কেউ এমন সাহস করেনা। তবে রাতের আঁধারে হতে পারে। এছাড়াও ভবিষ্যতে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্মৃতিফলকটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে।
এদিকে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া সূর্য সন্তানদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলকটি রক্ষায় অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতনমহল।