রবিবার, ২৯ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » লালমোহনে শালিসে মারধর পরবর্তী আত্মহত্যার অভিযোগ, বেঁধেছে রহস্যের দানা || লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহনে শালিসে মারধর পরবর্তী আত্মহত্যার অভিযোগ, বেঁধেছে রহস্যের দানা || লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, লালমোহন প্রতিনিধি ॥ ভোলার লালমোহনে এক রিক্সাচালকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। প্রথমে রিক্সা চুরির অপবাদে শালিস বৈঠকে মারধর পরবর্তী মৃত্যুর অভিযোগ। পরে শালিস বৈঠকে মারধর ও জরিমানার অপমান সইতে না পেরে মো. হোসেন (৩০) নামে এক রিক্সাচালকের আত্মহত্যার অভিযোগ তুলে তার পরিবার।
শনিবার রাতে লালমোহন পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ড ওয়েস্টার্ণ পাড়ার পেশকার হাওলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হোসেন ওই এলাকার জৈনব আলী হাওলাদার বাড়ির রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে তার মা বাদি হয়ে শালিসদার স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফুল কবির, রিক্সার মালিক সিরাজ ও আক্তার দালালসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করে লালমোহন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-২০, তারিখ ২৯ আগস্ট।
জাানা যায়, ৪ দিন আগে ওই এলাকার সিরাজের গ্যারেজের একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা চুরি করে বোরহানউদ্দিনের শান্তিরহাট এলাকায় বিক্রি করেন হোসেন। বিষয়টি জেনে ওই রিক্সা উদ্ধারপূর্বক হোসেনকে ডেকে এনে স্থানীয় রিক্সার মালিক সিরাজ ও আকতার দালাল তাকে বেধরক মারধর করে।
এদিকে শনিবার রাতে হোসেনের মা ও বাবা জানায়, শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন রিক্সাচালক হোসেন। ওইদিন রাতে স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফুল কবিরের বরাতে হোসেনের মা কমলা বেগম ও বাবা রফিকুল ইসলামকে ডেকে নেয় রিক্সার মালিক সিরাজ। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন, সিরাজের রিক্সা চুরির দায়ে ছেলের নামে শালিস বৈঠক চলছে। শালিস বৈঠকে হোসেনের প্রথমে ৫০ হাজার, পরে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১শত বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফুল কবির। এ সময় মা-বাবার সামনেই ছেলেকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন কাউন্সিলর। ফয়সালার পর রাতে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন মা-বাবা।
বাড়িতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় হোসেন। পরে স্বজনরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আর রবিবার দুপুরে জানান, শালিসে মারধর পরবর্তী ঘরে এসে রাতের খাবার খেয়ে বাইরে বেরিয়ে আম গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন হোসেন।
হোসেনের মা ও বাবা অভিযোগ করে বলেন, রিক্সা চুরির অপবাদে রিক্সার মালিক সিরাজ ও আক্তার দালালসহ কয়েকজন মিলে তাদের ছেলেকে মারধর করে। পরে স্থানীয় শালিসদের কাছে নিয়ে গেলে কাউন্সিলর সাইফুল কবিরও বিচারের মজলিসে তাকে মারধর করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুর কবির বলেন, হোসেন কে মারধর করা হয়নি। তাকে কান ধরে উঠাবসাসহ জরিমানা করা হয়েছিল।
এদিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
পরে রবিবার সকালে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে হোসেনের মা বাদি হয়ে লালমোহন থানায় মামলা দায়ের করেন।
লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে হোসেনের মা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এর আগেও শালিস বৈঠকে অভিযুক্তদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর সাইফুল কবিরের বিরুদ্ধে। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন এলাকাবাসি।