
বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | মুক্তমত | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » “বড় লোকের সবই right , গরীব করলে wrong”
“বড় লোকের সবই right , গরীব করলে wrong”
“বড়লোকের সবই রাইট হয়, গরীব করলে রং”, বাংলাদেশের স্বনামধন্য গায়ক প্রীতমের গানের কলি দিয়েই আজকের লেখা।
হ্যাঁ, আমরা অনেকের মুখে শুনতে পাই, আইন নাকি শুধু গরীবের জন্য। তবে এ কথার সাথে আমি একমত না হলেও, ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লালমোহন জোনালের ডিজিএম শাহীন হাসানের কর্মকাণ্ড আমাকে ওই কথাটির যর্থাথতা বুঝিয়েছে। লেখাটি পড়লে হয়তো আপনারাও যথার্থতা খুঁজে পাবেন।
প্রথমেই বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে আইন কি বলেঃ- বিদ্যুৎ আইন-২০১৮ এর ৭নং আইনের সপ্তম অধ্যায় অপরাধ ও দণ্ড তে বলা হয়েছেঃ- (৩২) কোন ব্যক্তি বাসগৃহ বা কোন স্থানে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করিলে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা চুরিকৃত বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
এবার আসা যাক বিস্তারিতঃ- উপজেলার ভিতরে কাজে গিয়ে দেখা গেল ৩টি নতুন ভবনের কাজ চলছে। কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজনে অবৈধ উপায়ে খুঁটি থেকে সংযোগ নেয়া হয়েছে। তবে নির্মাণাধীন এসব ভবনগুলোর প্রায় ১৫/২০ গজ দুরেই সরকারি কোয়াটারে থাকেন পল্লী বিদ্যুৎ লালমোহন জোনালের ডিজিওম এসএম শাহীন হাসান। তার বাসা সামনে খােলা মাঠ, আর মাঠের কোল ঘেঁষেই নির্মাণাধীন ৩টি ভবনের কাজ চলছে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে।
যাক, এটার তার বাসার কাছে এজন্য হয়তো স্বজনপ্রিতি।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লালমোহন বিদ্যুৎ স্টেশনের ভিতরেও ৪টি ভবনের কাজ চলছে। একটি ভবনের ভিতরে মিটার সংযোগের তার দিয়ে সংযোগ স্থাপন দেখতে পেলেও ঘরটি বন্ধ থাকায় ওখানে মিটার আছে কিনা দেখা সম্ভব হয়নি। তবে ওই একটি ভবন থেকে অন্য সবগুলো ভবনে নিন্মমানের তার আর জীবন্ত গাছের সাথে পেঁচিয়ে সংযোগ নিতে দেখা গেছে।
যাক, এটা হয়তো ডিজিএমের কর্মস্থল এজন্য চেপে আছেন।
এবার গ্রাহকের ভোগান্তি তুলে ধরা হলোঃ
উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরটিটিয়া গ্রামের আ: রহমান বলেন, গত ২৩আগস্ট তার বাসার মিটার খুলে নেয় পল্লী বিদ্যুত কর্মচারীরা। এসময় অপরাধ দেখানো হয়, খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে বাসার সামনে চা দোকান চালিয়েছেন তিনি।
অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আ: রহমান বলেন, আগে বাসায় থাকা মিটার থেকেই নিজের চায়ের দোকানে সংযোগ এনেছিলেন তিনি। এজন্য বিদ্যুতের কর্মীরা তার বাসার বিদ্যুৎ বিলের সাথে পার্শ্ব সংযোগের অপরাধ দেখিয়ে পরপর ২মাস (৫০০+৫০০) ১হাজার টাকা জরিমানা করে। ঘরের বিল আসে ১৫০/২০০টাকা। কিন্তু জরিমানা গুনতে হচ্ছে মাসে ৫শ টাকা। তাই দোকানের জন্য একটি মিটার দাবি করেন তিনি। কিন্তু তাকে মিটার দেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ সংযোগের অপরাধে লিপ্ত হন তিনি। এ অপরাধের জন্য তাকে সাজাও পেতে হয়েছে।
বাসার মিটার খুলে নেয়ায় বিদ্যুৎ অফিসে পুনরায় মিটার পেতে আবেদন করেন তিনি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে অবৈধ সংযোগের জন্য প্রথমে ১লক্ষ ৪হাজার ৪৮২, কমানোর আবেদনের পরে ৮৩হাজার ৪৩৬ এবং সর্বপরি ৪০হাজার ৫৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এসময় জরিমানা পরিশোধে রিসিট চাইলে তালবাহানা শুরু করে বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এমন অভিযোগ আ: রহমানের।
পরে টাকা পরিশোধ করা হলে জরিমানা রিসিটের বদলে বাসার মিটারের নাম্বার উল্লেখ করে ২১ আগস্ট তারিখে ৩৬০০ ইউনিটের ৪০হাজার ৫৬৩টাকা একটি বিল প্রস্তত করা হয়। ওই বিল এবং পুনরায় মিটার প্রাপ্তির জন্য আরও ৯শত টাকা পরিশোধ করেন তিনি। এরই মধ্যে একই মাস অর্থ্যাৎ ২১ আগস্টে একই মিটারের হিসাবে ১৭১ টাকার আরেকটি বিল প্রস্তুত করে তার হাতে দেয়া হয়। এ বিলটিও পরিশােধ করেন আ: রহমান।
প্রশ্ন হলো : অবৈধ সংযোগের বিল বাসার হিসাব নাম্বারে হবে কেন? যদি তাই হয়, তবে একই মাসের দুটি বিল কেন? একটি চায়ের দোকানে সাধারণত ৩০/৫০ ইউনিট হওয়ার কথা, সেখানে শিল্প বিলের মত ৩৬০০ ইউনিটের বিল কেন? ডিজিএমের নাকের ডগায় থাকা অবৈধ সংযোগের জরিমানা নেই কেন? পার্শ্ব সংযোগের জন্য যদি জরিমানা থাকে তাহলে বিদ্যুৎ স্টেশনের পার্শ্ব সংযোগের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো?
এসব প্রশ্নের উত্তরে পল্লী বিদ্যুতের লালমোহন জোনালের ডিজিএম এসএম শাহীন হাসান জানান, পুরো উপজেলার জন্য একটি মিটার রয়েছে। প্রতিটি দাপ্তরিক অফিসে সাব মিটার আছে, সাব মিটার অনুযায়ী প্রতি মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন দাপ্তরিক অফিসগুলো। তবে অবৈধ সংযোগের জন্য মূল মিটারে জমে থাকা অতিরিক্ত রিডিংয়ের বিল কে দেয়? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
এদিকে অবৈধ সংযোগ চালানোন দায়ে আইন অনুযায়ী আ: রহমানের কাছে থেকে ব্যবহৃত “চুরিকৃত বিদ্যুৎ মূল্যের দ্বিগুণ” নেয়া হয়েছে বলে জানান ডিজিএম।
তবে একটি চায়ের দোকানের বিল মাসে যেখানে সর্বোচ্চ ২০০/৩০০টাকা হওয়ার কথা এবং দ্বিগুণ হলে তা ৪০০/৬০০ হবে। সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের মত খরচ দেখানো হলো কিভাবে, এবং ব্যবহৃত বিদ্যুৎ নির্ধারণ হয় কিভাবে?
এমন প্রশ্নে ডিজিএম বলেন, অবৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ নির্ধারণের জন্য আমাদের অফিশিয়ালি ফরম্যাট রয়েছে। তবে আমি তা আপনাকে দেখাবো না।
ডিজিএমের এমন জবাবে গায়ক প্রীতমের সেই কথা মনে পগে গেল, “বড়লোকের সবই রাইট হয়, গরীব করলে রং”।