শনিবার, ২২ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | কোর্ট-কাচারী | জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ | স্বাস্থ্য » লালমোহনে নামের মিলে ৯ মাস কারাবন্দি দিনমজুর লিটন।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহনে নামের মিলে ৯ মাস কারাবন্দি দিনমজুর লিটন।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, নিজস্ব প্রতিনিধি : মোঃ লিটন। ভোলার লালমোহন উপজেলাধীন ধলীগৌরনগর ৪নং ওয়ার্ড চতলা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। পেশায় দিন মজুর।
তবে ওই গ্রামের চতলা হাইস্কুল সংলগ্ন উত্তর পাশে মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জরিত মোঃ লিটনের বাড়ি হওয়ায় দিনমজুর লিটনের জন্য কাল হয়ে দাড়ায় । নাম ও পিতার নাম এক হওয়ায় গত বছর ৭ ডিসেম্বর ওই এলাকার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ব্লকের কাজ করার সময় লালমোহন উপজেলার মঙ্গল দিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মোঃ জমিস উদ্দিন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন সেখান থেকে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে প্রেরন করেন , বিনাদোষে র্দীঘ ৯ মাস ধরে ওই কারাগারেই কারা ভোগ করছেন দিন মজুর মোঃ লিটন।
বিনাদোষে নিরপরাধ লিটন জেল খাটায় ওই এলাকায় এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে ।
ঢাকার পল্টন থানার মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪২/০৯ জিডিতে ২০০৯ সালের ২৮ জুন দুপুরে দেড়টায় ডিবির সোয়াত টিমের এসআই জুলহাস উদ্দিন আকন সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ পল্টন থানার আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ ৩০০ পিস অজ্ঞান করার ট্যাবলেটসহ মোঃ লিটন, মোঃ শামীম ও আরশাদ মিয়া নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আটক তিনজনের বিরুদ্ধে ডিবির এসআই জুলহাস উদ্দিন আকন বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মোঃ লিটনের বয়স ২৬ বছর উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে কারাগারে থাকা দিন মজুর মোঃ লিটনের বয়স জাতীয় পরিচয় পত্র অনুয়ায়ী সে সময় ১৮ বছর ছিলো। এদিকে ওই মামলাটি আদালতে বিচারের আগেই গ্রেফতারকৃত তিন আসামি জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বিচারে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং ২-এর বিচারক জাকিয়া পারভিন আসামিদের ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(২) ধারায় প্রত্যেককে দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেন। কিন্তু আসামিরা পলাতক ছিলো।
এদিকে এ মামলায় ভোলার লালমোহন থানায় ওয়ারেন্ট আসলে মঙ্গল দিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রেও এএসআই মোঃ জসিম উদ্দিন মোঃ লিটন নামে দিন মজুরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। সে সময় লিটন গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে তাকে একটি মামলার আসামী বলে জানানো হয়।
মোঃ লিটনের ভাই রিক্সা চালক সাইফুল ইসলাম জানান, আমার ভাই দিন মজুরের কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন সে কোন অপরাধের সাথে জরিত নয়। মোঃ লিটন নামে আমাদের গ্রামে এক জন আছে সে অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। শুনেছি ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে সে জড়িত রয়েছে। শুধু নামের মিল থাকায় পুলিশ আমার ভাইকে ভুল করে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। বর্তামানে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ঢাকার আদালত ও আইনজীবিদের কাছে ছুটে চলছি।
তিনি আরো জানান, রিক্স চালিয়ে সংসার পরিচালানা ও ভাইয়ের মুক্তির জন্য প্রতিদিনই ছুটছি। জানিনা আল্লাহ কবে আমাদের দিকে তাকাবে। মহান আল্লাহ’র দিকে তাকিয়ে রয়েছি। লিটনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের দিকে তাকাতে পারিনা। তারা অসহায় জীবন যাপন করছে। তার বৃদ্ধা মা নিলুফা বেগম শোকে কাতর নিরপরাধ ছেলের মুক্তির জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার একটায় কথা আমার ছেলে কবে বাড়িতে আসবে ।
এ ব্যাপারে ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সালাউদ্দিন জানান, এএসআই জসিম উদ্দিন আমাকে লিটনকে গ্রেফতারের আগে মোঃ লিটন পিতা নুরুল ইসলাম নামে এক আসামীকে খুঁজছে বলে আমাকে জানান কিন্তু আমি তখন তাকে সে আসামীর কোন খবর দিতে পারিনি।
তিনি আরো জানান, আমি গত ৬/৭ দিন আগে জানতে পারি আসলে পুলিশ যে লিটনকে গ্রেফতার করেছে সে এই লিটন না। পুলিশ মূলত ওই এলাকার বাসিন্দা যে র্দীঘ দিন ঢাকায় থেকে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত এক লিটনকে খুঁজছিল। পুলিশ ভুল করে দিন মজুর লিটনকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে আমরা এলাকার গণ্যমাণ্যরা আগামী ১/২ দিনের মধ্যে পুলিশের কাছে যাবো। নিদোষ লিটনকে মুক্ত করতে আমরা এলাকাবাসী মাঠে নামবো।
এ ব্যাপারে মঙ্গল শিকদার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, লিটনকে গ্রেফতার করে আদালতের পাঠানোর ১৫ দিন পর তার ভাই সাইফুল আমার কাছে এসে জানান গ্রেফতারকৃত লিটন মামলার আসামী লিটন না। আসামী লিটনের বাড়ি তাদের এলাকার পাশে স্কুলের পিছনে তারা নাকি দীর্ঘ দিন ঢাকায় রয়েছে। পরে আমি তার কথা শুনে তাকে মামলার নথি নিয়ে আসতে বলি। ভুল আসামীকে গ্রেফতার করলে নথিতে আসল আসামীর বাড়ির নাম পিতার ও মাতার নামসহ সব পাওয়া যাবে। যদি ভুল হয় নথি নিয়ে আসার পর তাকে নিয়ে ওসি স্যারের কাছে যাবো বলেছি। পরে সে এখনও আসেনি।
লালমোহন থানার ওসি মীর খায়রুল কবির জানান, এ বিষয়ে আমি কখনও শুনিনি। নাম ও পিতার নাম এক থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। যদি এ লিটন আসামী না হয় তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।