
মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০১৫
প্রথম পাতা » বিবিধ | শিরোনাম | সর্বশেষ » বিকাশের লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ছবি তোলার নির্দেশনা থেকে সরে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বিকাশের লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ছবি তোলার নির্দেশনা থেকে সরে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
লালমোহন বিডিনিউজ ঢাকা: মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার বা তার বেশি টাকার ক্যাশ ইন বা ক্যাশ আউট করা হলেই এজেন্ট ওই লেনদেনকারীর ছবি তুলে তথ্য সংরক্ষণ করবেন। এমন নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এটি বাস্তবায়ন এজেন্টদের জন্য সহজসাধ্য না হওয়ায় এ নিয়ে নতুন করে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সূত্রে জানা গেছে, লেনদেনে ছবি তোলার পরিবর্তে যোগ হতে পারে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা নেয়ার বিষয়টি। অর্থাৎ এজেন্টরা গ্রাহকের ছবি না তুলে জমা নেবে জাতীয় পরিচয়পত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নির্দেশনাটি প্রত্যাহারের পক্ষে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারি কোম্পানিগুলো তথা স্টেকহোল্ডাররা। তারা সার্কুলার জারির পরই গভর্নরকে ফোন করে আপত্তি জানিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আনুষ্ঠানিক মতামত জানতে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বেগম নাজনীন সুলতানার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে স্টেকহোল্ডার ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা, মহাব্যবস্থাপক কেএম আবদুল ওয়াদুদসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক মানুষের কাছ থেকে পরিচিত সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বিশেষ করে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করা হয়। এ ধরনের লেনদেন ৫ হাজার টাকার কম হয় না। তাই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল।’
ছবি তোলার যে প্রক্রিয়া তা বিকাশের সহজতর লেনদেন প্রক্রিয়াকে একটু জটিল করে তুলবে বলেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কারণ এতে করে প্রতিটা স্থানীয় এজেন্টকে গ্রাহকের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করতে হবে। কেউ ৫ হাজার টাকা লেনদেন করলে তার ছবি তুলে কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকের ডাটাবেজের সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। যা প্রত্যন্ত গ্রামের এজেন্টদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এছাড়া যেসব সাধারণ গ্রাহকের ছবি তোলা হবে সেগুলোর সংরক্ষণে কতটুকু নিরাপত্তা থাকবে সেটাও একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা মিলছে বিকাশ এজেন্টদের। জটিল প্রক্রিয়া এবং যাদের ছবিগুলো নেয়া হবে তারা এজেন্টদের কাছে কতটা নিরাপদ থাকবে এই মুহূর্তে সেই প্রশ্নগুলোও সামনে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যে কারণেই বিষয়টি পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নির্দেশনা সম্পর্কে রাজধানীতে ধানমণ্ডির এক বিকাশ এজেন্টে জুলহাস মিয়া বলেন, ‘ভাই এতো সময় কই। খাতা কলম নিয়া বাইসাই সামলাইতে পারি না। আর ছবি তুইলা কম্পিউটারে রাখমু কেমনে। আর ছবি তোলার ক্যামেরাটা কি আমাগো কোম্পানি দিব? এত ঝামেলা কইরা ভাই ব্যবসা করতে পারুম না।’ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
এজেন্ট কর্তৃক ছবি তুলে রাখার বিষয়টি বেশ একটু জটিল উল্লেখ করে বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশনাটি আমরা পেয়েছি। বুঝতে পারছি প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। এ কারণে আমরা মার্কেট অ্যানালাইসিস করছি- এটা ইমপ্লিমেন্টেশন করলে আমাদের এজেন্ট এবং গ্রাহকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, আসলেই ব্যবসার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না সেটাও দেখছি।’
নির্দেশনা জারির একদিন পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক কে এম আব্দুল ওয়াদুদ এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘এটি কার্যকরী একটা প্রক্রিয়া হলেও বেশ জটিল হয়ে গেছে। গ্রামের মধ্যে অনেক এজেন্ট রয়েছে যাদের জন্য এটা করা খুবই কঠিন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মধ্য দিয়ে লেনদেন খুব সহজতর হওয়ার কারণে সেখানে ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে একটু সমালোচনা হচ্ছে। এজন্য আমরা এ সপ্তাহেই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং করবো। তাদের পরামর্শ নেব। কোনটা করলে ভালো হয়। তবে খুব সম্ভবত ছবির বিষয়টি বাতিল করা হতে পারে। এখানে ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি লেনদেনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের বিষয়টি যোগ হতে পারে।’ তবে এবার একটু ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই জানালেন এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, নির্দেশনায় ছবি তোলার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়নি। উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মোবাইল সেবাদানকারী কোম্পানিগুলোর মতামত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮টি ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত এই সেবাটি চালু করতে সক্ষম হয়েছে ২০টি ব্যাংক। বিকাশ, ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশ, ওকে ক্যাশ, হ্যালো ক্যাশ, স্পট ক্যাশ, আইএফআইসি মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি নামে ব্যাংকগুলো এই সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে ৫ লাখেরও বেশি এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটির কাছাকাছি। এ সেবায় প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হচ্ছে।