বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | ভোলা | মুক্তমত | শিরোনাম | সর্বশেষ » স্থানীয় নির্বাচন, দলীয় প্রতিক ও আমাদের চাওয়া
স্থানীয় নির্বাচন, দলীয় প্রতিক ও আমাদের চাওয়া
স্থানীয় নির্বাচন, দলীয় প্রতিক ও আমাদের চাওয়া
—————————————————
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দল থাকবে, দলের প্রতিক থাকবে, দলীয় প্রার্থী, কর্মী সমর্থক থাকবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমজনতার ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের ও দেশবাসীর কল্যাণে কথা বলবেন সংসদ সদস্যগণ। যে দলের নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা বেশি তারা সরকার গঠন করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তাই সংসদ নির্বাচনে দল তাদের যোগ্য প্রার্থী মনোনিত করে এবং তাকে দলীয় প্রতিক প্রদান করে। নিজ দলীয় অন্য কেউ বিদ্রোহী হলে একদিকে যেমন দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, অপরদিকে দলীয় প্রার্থীর জয় নিয়ে শঙ্কাও দেখা দেয়। তাই সাধারণ কর্মী সমর্থকদের কাছে ওই প্রার্থী অপছন্দনীয় হলেও দলকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে ভোট দেয় কর্মী ও সমর্থকরা। সেক্ষেত্রে দলকে/দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার বাসনায় ভোটকেন্দ্রে যায় কর্মী সমর্থকরা। পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদেরকে ও ভোট প্রদানে আগ্রহী করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সর্বপরি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনিত করে প্রতিক বরাদ্দ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন সংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন করা হয়। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের শুরুটা হয়েছে সিটি ও পৌরসভার মেয়র নির্বাচন দিয়ে। সর্বশেষ এটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রয়োগ করা হয়।
ফলে তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন দলের অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি থাকার পরও দল যাকে পছন্দ করছে বা যোগ্য মনে করছে তাকে মনোনিত করছেন। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে একজনকে সিলেক্ট করা দলের পক্ষে কঠিন হলেও দল তাই করছে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দকে গুরুত্বারোপ করা হয় বলে অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে। তাছাড়াও প্রার্থীরা জনগণের আস্থা অর্জনের চেয়ে দলের উপর প্রতীকের উপর আস্থাশীল হয়ে পড়ে। জনগণের দোরগোড়ায় না গিয়ে দলীয় উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছে ধরণা দেয়।
তবে তৃণমূলে যারা জনগণের সুখে দু:খে পাশে থাকা অনেকেরই আগ্রহ থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার। কিন্তু দল থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়ায় অন্যরা থেকে যায় বঞ্চিতদের তালিকায়। অন্যদিকে স্থানীয় জনগণ যাকে প্রতিনিধি হিসেবে পেতে আগ্রহী তাকে না পেয়ে নিরাশও হচ্ছেন। অনেকেই আবার স্থানীয় জনগণের চাপে জনপ্রতিনিধি হতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। এতে করে দলে যেমন অন্তর্কোন্দল দেখা দেয় অপরদিকে ভোটার থাক দুরের কথা দলীয় কর্মীরাও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তৃণমূলের সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দকে বিসর্জন দিয়ে দলীয় প্রার্থীর প্রতি আগ্রহী হতে পারেন না তাই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এতে করে দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
গত বছরের মার্চে আইনগুলো সংশোধন করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে সংশোধনের পর কার্যকর করারও কথা ছিল। তবে তা এখনও হয়নি।
আমাদের চাওয়া: যেহেতু স্থানীয় নির্বাচনে জয় পরাজয়ে কোন দলের উপর প্রভাব পড়বেনা সেহেতু দলীয় প্রতীক সরিয়ে ফেললে সব দলেরই একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ফলে নির্বাচন হবে আমেজপূর্ণ, সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। তৃণমূল পর্যায়ে কোন দলের নয় বরং জনসম্পৃক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী সাধারণ মানুষ।
—————————–
সালাম সেন্টু, লালমোহন-ভোলা