ভোলা লক্ষীপুর মহাসড়ক বিলীন অনিদিষ্ট কালের জন্য ফেরীসহ যানবাহন চলাচল বন্দ

ভোলা প্রতিনিধি : ভোলা সদরের ইলিশা ফেরীঘাট এলাকায় প্রায় ৩’শ কিলোমিটার নতুন করে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষ। সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পারাপাঘাট, একটি মসজিদ, অর্ধশতাধি ঘরবাড়ি ও ৫০টির অধিক দোকানপাঠ বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলেই আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভোলা-লক্ষীপুর ফেরীঘাট, দুটি বৃহৎ বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। অনেকেই আবার ভাঙ্গন আতংকে ঘর বাড়ি ও দোকানপাঠ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে দরিদ্র মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ঈদের আগের দিন থেকেই ফেরীঘাট এলাকা থেকে ইলিশা চডার মাথা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়। বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভাঙ্গল কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহনের পর ওই পয়েন্ট দিয়ে জিও ব্যাগ ফালানোর কাজ শুরু হয়।
কিন্তু রোববার সকাল থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত ফেরীঘাটের ৩০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফের ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে একটি পারাপার ঘাটসহ ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সড়ক ভেঙ্গে ভোলা-লক্ষীপুর রুট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জেলার সাথে ২১ জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশী থাকায় অনেকেই দোকানপাঠ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় পাননি। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে ফেল আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
ভোলা প্রেসক্লাব সম্পাদক সামস উল আলম মিঠু বলেন, নদী ভাঙ্গন পরিস্তিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে, ফেরীঘাটের প্রধান সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙ্গনে আজ সমগ্র ভোলাবাসী আতংকগ্রস্থ, তাই ইলিশাসহ ভোলাকে রক্ষা করা জন্য সিসি ব্লকসহ সকল প্রযুক্তি ব্যাহার করা জরুরী।
ফেরীঘাট এলাকায় বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, সকাল থেকে তীব্র ভাঙ্গন সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। নদী উত্তাল থাকায় পাড় ভেঙ্গে সরু হয়ে যাচ্ছে ফেরীঘাটের সড়ক।
ম্যৎস্য কামাল হোসেন বলেন, দুই দিন ভাঙ্গন কম থাকায় হঠাৎ করেই তা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোন মুহুর্তে ঘাটসহ বেশীরভাগ এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহেদ আলী বলেন, গত এক সপ্তাহে মেঘনার উত্তর ও পূর্ব পার্শ দিয়ে তীব্র ভাঙ্গন চলছে। এরই মধ্যে পায় অর্ধেক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার জিলন বলেন, নদী ভাঙ্গনের যে ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে, এতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ইলিশা ইউনিয়ন বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই ভাঙ্গন রোধে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ভাঙ্গনের শিকার মো: কামাল হোসেন বলেন, নদীতে আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে চলে গেছে। ১৫ গন্ডা জমির মধ্যে ১০ ঘন্টা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দাবী করেন তিনি।
ইব্রাহিম বলেন, ইলিশা থেকে উৎপাদিত কোটি টাকার তরিতরকারি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো, কিন্তু নদী ভাঙ্গনের কারনে জমির পরিমান কমে গেছে। চলতি বর্ষায় তার ১০ কানি জমির মধ্যে ২ কানি বিলীন হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, বিকাল পর্যন্ত প্রাং ২২০ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে বিশ্বরোড এলাকা দিয়ে প্রটেকশন কাজ চলছে, পরবর্তিতে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়েও জুরুরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ফেরী এলাকা ছাড়াও চলতি বর্ষা মৌসুমে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর, সোনাডগী, মুরাদ সফিউল্ল্যাহ, বাঘার হাওলাসহ অন্তত ১০টি গ্রামের ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন চলছে। বিগত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে ভাঙ্গনের তীব্রতা অনেক বেশী। ভাঙ্গন বন্ধে সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী এলাকাবাসীর।
এদিকে, বৈরী আবাহাওয়া ও নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা থাকায় দিনভর ভোলা-লক্ষীপুর রুটের ফেরী চলাচল বন্ধ ছিলো। এতে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে ভোলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভোগান্তির মধ্যে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। ঘাটেও তীব্র লাইন জটের সৃষ্টি হয়েছে।