বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন | জেলার খবর | ভোলা | শিরোনাম | সর্বশেষ » জেলে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম, ভোলার চরফ্যাসনের ৬ জেলের মৃতদেহ কক্সবাজার সমুদ্র থেকে উদ্ধার।।লালমোহন বিডিনিউজ
জেলে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম, ভোলার চরফ্যাসনের ৬ জেলের মৃতদেহ কক্সবাজার সমুদ্র থেকে উদ্ধার।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ,ভোলা প্রতিনিধি :ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার ঢালচরের বঙ্গোপসাগর মোহনায় ২টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২৯ জেলের মধ্যে একটি ট্রলারসহ ২ জনকে জীবিত ও ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী-গাল পয়েন্ট থেকে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢেউয়ের সাথে ভেসে আসা অর্ধ ডুবন্ত ট্রলারের মধ্য থেকে মৃতদেহ এবং বুধবার(১০জুলাই) ভোরে ঢেউ আছড়ে পড়া সাগর পাড় থেকে জীবিতদের উদ্ধার করা হয়। জীবিত ২ জনকে মুহূর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃত এবং জীবিত উদ্ধার করা সব জেলের বাড়ি ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার জিন্নাগড় এবং মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নাজিম উদ্দিন গ্রামে। কক্সবাজার সদর থানার সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কক্সবাজারে জেলেদেও মৃত উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পরলে চরফ্যাসনের আহাম্মদপুর ও মাদ্রাজ,শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের জেলে পাড়াগুলোতে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। নিহত স্বজনদের জীবিত বা মৃত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার আশায় শোকাহত স্বজনরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি(তদন্ত) খায়রুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে সাগরের সী-গাল পয়েন্ট এলাকায় একটি অর্ধডুবন্ত জেলে ট্রলারের পাশে ৬টি মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ সমুদ্র সৈকতের সী-গাল পয়েন্টের অর্ধডুবন্ত জেলে ট্রলারের পাশে থেকে ৬ জেলের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এবং বুধবার(১০জুলাই) ভোরে সাগার পাড়ে অর্ধডুবন্ত জেলে ট্রলার পাশে থেকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় আরো ২ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত জেলেদের লাশগুলো পচেঁ-গলে গেছে,দেহের বেশীর ভাগ অংশ পোকা মাকড়ে খেয়ে ফেলেছে। জীবিত উদ্ধার করা ২জন হচ্ছেন ট্রলারের মাঝি মনির এবং জেলে জুয়েল। এই ২জনের বাড়ি চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নাজিম উদ্দিন গ্রামে। জীবিত মুহূর্ষ ২জনকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃত উদ্ধার করা জেলেদের মধ্যে মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নাজিমুদ্দিন গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে কামাল, আব্দুস শহীদের ছেলে বাবুল, জিন্নাগড় ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে অলি উদ্দিন, বজলু হাওলাদারের ছেলে অজিউল্যাহ পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। দেহ পচেঁগলে যাওয়ায় অপর জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
উল্লেখ্য, সম্পতিক ঝড়ে সাগরে মাছধরার সময় চরফ্যাসনের চর মাদ্রাজ ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ২টি ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২৯ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
গত শনিবার মনপুরার টেংরার চর এলাকায় মনির মাঝির ট্রলার এবং রোববার চরফ্যাসনের ঢালচর উপকূলের শিবচরে শাহজাহান মাঝির ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। কক্সবাজারে উদ্ধার করা জীবিত ও মৃত সবাই টেংরার চরে ডুবে যাওয়া মনির মাঝির ট্রলারের জেলে। এই ট্রলারের ১৪ জেলের মধ্যে এখনো ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া রোববার ঢালচরের শিবচরে ডুবে যাওয়া শাহজাহান মাঝির ট্রলারের ১৫ জনের সবাই এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারে জেলেদের মরদেহ এবং জীবিত উদ্ধারের খবরে চরফ্যাসনের মাদ্রাজ ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নের জেলে পরিবারগুলোতে শোকের মাতম চলছে। শোকাহত জেলে পরিবারের সদস্য এবং পাড়া প্রতিবেশীরা চরফ্যাসন থানায় ছুটে এসেছেন। নিখোঁজ স্বজনদের বিষয়ে একটু খবর জানতে থানা পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে আহাজারী করছেন। কেউ কেউ স্বজনদের শেষচিহ্ন পাওয়ার আশায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, জীবিত ও মৃতদের নাম-পরিচয় জানা গেলেও লাশগুলো এখনো সঠিক ভাবে শনাক্ত করা যায়নি। আমরা ওই ট্রলারের ১৪ জেলের ছবি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। সেটি কক্সবাজারে পাঠানোর পর তাদের মৃতদেহ শনাক্ত করা যাবে।
চরফ্যাসন থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সামসুল আরেফিন বলেন, শোকাহত জেলে পরিবারগুলো এবং কক্সবাজার সদর থানার কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।