বুধবার, ৬ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর | বরিশাল | বিভাগের খবর | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » স্বামীর খোজে আবারও লালমোহনে বহুল আলোচিত দিপ্তি।। লালমোহন বিডিনিউজ
স্বামীর খোজে আবারও লালমোহনে বহুল আলোচিত দিপ্তি।। লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ, নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০১৭ সালের ৪জুলাই গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও স্বামীর অধিকারের দাবিতে লালমোহনে আসা বহুল আলোচিত দিপ্তি রানী দাস এবার ১৪ মাসের সন্তান নিয়ে স্বামী উজ্জলের খোজে লালমোহনে শ্বশুর কালিপদের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
দিপ্তির অভিযোগ, স্বামী উজ্জলের সাথে ভারতের কলকাতার হাবড়া বদর রোডের দত্তপুকুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বছরখানেক সংসার করেন তিনি। এরই মধ্যে তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান প্রিয়ন্তি। সন্তানের বয়স ৭ মাস হলেও উজ্জলের পিতা কালিপদের চাপে নতুন করে উজ্জল নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে দিপ্তি ও তার সন্তানকে ভারতে রেখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে উজ্জল।
গত ১মার্চ আবারো বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে লালমোহন এসে অবস্থান করছে উজ্জল এমন খবর পেয়ে দিপ্তি ৬মার্চ বুধবার সকালে লালমোহন চলে আসে। এসেই শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সন্তান নিয়ে বদ্ধ দরজার সামনে অবস্থান নেয় দিপ্তি।
উল্লেখ, লালমোহন উপজেলার সদর বাজারের উজ্জল ট্রেডার্সের মালিক ব্যবসায়ী কালিপদ বাবুর ছেলে উজ্জল দাস ওরপে ঝুলন কে স্বামী দাবি করে গত ২০১৭ সালের ৪জুলাই শ্বশুর কালিপদের বাসার সামনে অনশনে বসে ঢাকার গাজীপুরের মেয়ে দিপ্তি রানী দাস।
দিপ্তির ভাষ্য মতে, ব্যবসায়ী কালিপদ বাবুর ছেলে উজ্জল ঢাকার গাজিপুরে ভাড়া বাসায় থেকে চাকুরী করার সুবাদে ২০১৫ সালে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া ও গার্মেন্সকর্মী দিপ্তি রানীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং ৬মাসের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়।
প্রায় ১বছর একত্রে বসবাস করে। এরই মধ্যে দ্বীপ্তির গর্ভে সন্তান আসলে দ্বীপ্তির স্বামী উজ্জল সে সন্তান নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে পানিতে ঔষধ মিশিয়ে দিপ্তির গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়। উজ্জলের আচরণে সন্দেহ হয় দিপ্তির। তাই শ্বশুর শাশুরির সঙ্গে থাকতে উজ্জলের গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য বললে বিভিন্ন অযুহাত দেখাত উজ্জল। বাবা কালিপদ বিয়ে মেনে নিতে সময় লাগবে বলে জানিয়ে সুযোগ বুঝে কিছুদিন পর হঠাৎই উধাও হয় উজ্জল। অনেক খোজাখুজি করে উজ্জলের সন্ধান না পেয়ে অবশেষে স্বামীর খোজে লালমোহনে চলে আসে দিপ্তি। সংবাদ পেয়ে শ্বশুর কালীপদ দাস তার পুত্রবধূকে ঘরে না তুলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং নিজের ব্যবসা বাণিজ্য ও বাসাবাড়ি ফেলে লুকিয়ে/পালিয়ে থাকে।
এদিকে শ্বশুড় বাড়ীতে ঠাই না পেয়ে দ্বীপ্তি লালমোহন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ভাইচ চেয়ারম্যান ফখরুল আলম হাওলাদার, সেসময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামছুল আরিফ, লালমোহন উপজেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের সভাপতি/ সম্পাদক সহ সকলের কাছে বিচার চেয়েও কোন কুল কিনারা করতে পারেনি।
অবশেষে গত ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই বুধবার বেলা ২.৩০ টার সময় অনাগত সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে লালমোহনের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে বাজারের চৌরাস্তায় মানববন্ধন পালন করে দিপ্তি।
স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে লালমোহনে দিপ্তির প্রায় ১মাস অবস্থানের করুণ আর্তনাদের চিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশনে তুলে ধরেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
পরিশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৭ জুলাই ২০১৭ বৃহস্পতিবার দিপ্তিকে ঘরে তুলে নেয় শ্বশুর কালিপদ দাস।
তবে উজ্জল পালিয়ে ভারতে অবস্থান করায় কিছুদিন পর দিপ্তিকে ভারতে উজ্জলের কাছে দিয়ে আসেন শ্বশুর কালিপদ।
ভারতে পুনরায় গড়ে ওঠে দিপ্তি ও উজ্জলের সংসার। কিন্তু বিধি বাম। বছর খানেক সংসার করার পর নতুন ষড়যন্ত্র করতে থাকে উজ্জল। দিপ্তিকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে পিতার ব্যবসায় মনোযোগী হয়ে এখানেই থাকবে বলে কলকাতার দত্তপুকুরের ভাড়া বাসা ছেড়ে দেয় উজ্জল। এরপর কিছুদিন আত্মীয় গৌরাঙ্গের ছেলে প্রবির দাসের বাড়িতে থেকে অবশেষে দিপ্তিসহ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় তারা।
দিপ্তি বলেন, ভারতের বনগা নামক স্থানে আমাকে বসিয়ে রেখে গাড়ির খোজ করতে গিয়ে উধাও হয় উজ্জল। পরিশেষে আমি পুনরায় ছেড়ে দেয়া ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেই। এরই মধ্যে শ্বশুর কালিপদ ভারতে গিয়ে হাবড়া থানায় অবৈধ বাংলাদেশী হিসেবে আমার নামে অভিযোগ করে আমাকে হাজতবন্দী করার ফন্দি আটে। সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
দীর্ঘদিন ভারতের অসহায়ত্বের জীবন যাপন সহ্য করতে না পেরে আবারো স্বামী উজ্জলকে ফিরে পেতে অবশেষে বাংলাদেশে পাড়ি জমায় দিপ্তি। দেশে এসে জানতে পারে উজ্জল এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় বিয়ে করেছে।
দিপ্তি জানায়, আমি আবারো উজ্জলের লালমোহনের বাড়ি এসে তাকে খুজতে গেলে ঘরে ঢুকতে দেয়নি তার পরিবার। শাশুরি ও শশুর আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন।
বিষয়টি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের নজরে আসলে তারা আমাকে পার্শ্ববর্তী একটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন এবং বুধবার বিকেল ৫টায় ফয়সালার কথা বললে এখনো কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
উজ্জল কে ত্যাজ্যপুত্র করা হয়েছে জানিয়ে কালিপদ এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।